ডিপফেক প্রযুক্তিতে কারও মুখচ্ছবি ব্যবহার করে ছবি বা ভিডিও বানালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ। শুধু তা-ই নয়, অপব্যবহার রুখতে গড়া প্রয়োজন টাস্ক ফোর্সও। এই মর্মে নতুন বিল পেশ হল লোকসভায়। ‘প্রাইভেট মেম্বার’স বিল হিসাবে এই বিল পেশ করেছেন শিব সেনার সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডে। তিনি বলেন, “ডিপফেক প্রযুক্তির কারণে অনেকেই হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এটা রোখা প্রয়োজন। কী ভাবে তা সম্ভব, বিলে সে সবই বলা আছে।”
বিলে বলা আছে, কারও মুখ ব্যবহার করে ডিপফেক কনটেন্ট বানালে, সেই ব্যক্তির অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। নইলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। যদি কেউ খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও কনটেন্ট বানান, তাতেও কড়া পদক্ষেপ। পাশাপাশিই, নজরদারির জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলে। বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা, নির্বাচন এবং গোপনীয়তার অধিকারকে কী ভাবে প্রভাবিত করতে পারে ডিপফেক, সে বিষয়ে তদন্ত করবে টাস্ক ফোর্স। পাশাপাশি, ডিপফেক কনটেন্ট চিহ্নিত করতে উপযুক্ত প্রযুক্তিরও খোঁজ চালাবে তারা।
ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সমাজের সর্ব স্তরেই। এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে বদলে দেওয়া হচ্ছে কারও শরীর, তো কারও মুখ। এক জনের শরীরে অন্যের মুখ বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়ো ভিডিয়ো। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে শালীনতার মাত্রা। এই প্রযুক্তিরই শিকার হয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রীরা। ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছিল অভিনেত্রী কাজলের একটি ডিপফেক ভিডিয়ো। তাতে কাজলকে ক্যামেরার সামনে পোশাক পরিবর্তন করতে দেখা গিয়েছিল। ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পরে ইন্টারনেটের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলি ওই ভিডিয়ো পরীক্ষা করে জানায়, ভিডিয়োটি আসলে এক জন টিকটক তারকার। টিকটকে তিনি পোশাক পরার ভিডিয়ো পোস্ট করেন প্রায়শই। তেমনই একটি ভিডিয়োয় কাজলের মুখ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ এবং রশ্মিকা মন্দানার সঙ্গেও। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ করা উচিত বলে সরব হয়েছিলেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। পরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে কঠোর আইনপ্রণয়নের কথা ভাবছে দীর্ঘ দিন ধরে। অপব্যবহার রুখতে ২০২৪ সালে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকও নির্দেশিকা জারি করেছিল। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মত, শুধু আইন প্রণয়ন করে কৃত্রিম মেধা (এআই) প্রযুক্তির অপব্যবহার রোখা যাবে না। উন্নত প্রযুক্তি দিয়েও ‘ডিপফেক’ জাতীয় কুকর্ম আটকাতে হবে। শীঘ্রই এ বিষয়ে বিধি আনা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন অশ্বিনী।