• ফোনে সর্বক্ষণ ‘জিপিএস-অন’ বাধ্যতামূলক করতে চায় কেন্দ্র, মানতে নারাজ গুগল-অ্যাপল
    বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে বিরোধিতার মুখে স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এবার ব্যক্তিগত পরিসরে নজরদারি চালানোর জন্য মোদি সরকার অন্য পদ্ধতি অবলম্বন নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে। কেন্দ্র চাইছে, প্রত্যেক স্মার্টফোনের জিপিএস লোকেশন যেন সবসময় চালু থাকে। এতে কোন ফোন ঠিক কোন জায়গা রয়েছে, তা অতি সহজে নিখুঁত জানা যাবে। তবে এবার আর সরাসরি নয়, সিম অপারেটর সংস্থাগুলির মাধ্যমে নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এই নিয়ে সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে। জিও, এয়ারটেল এই সংস্থার সদস্য। ওই চিঠিতে সিওএআই জানিয়েছে, লোকেশন সংক্রান্ত তথ্য তখনই দেওয়া সম্ভব যখন স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলি ‘জিপিএস’ প্রযুক্তি সবসময় চালু রাখার ব্যবস্থা করবে। কারণ, স্যাটেলাইট সিগনাল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে এই প্রযুক্তি কাজ করে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের প্রস্তাবে শুরুতেই বেঁকে বসেছে অ্যাপল, স্যামসাং এবং গুগলের মতো ফোন নির্মাতা সংস্থাগুলি। তারা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, গ্রাহকদের গোপনীয়তা নিয়ে তারা আপস করতে রাজি নয়। গত শুক্রবার ফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সেই বৈঠক পিছিয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তও হয়নি।

    বর্তমানে কোনও ফোনের অবস্থান জানার জন্য টাওয়ার লোকেশনের উপর ভরসা করতে হয়। কিন্তু এতে একেবারে নিখুঁত তথ্য পাওয়া যায় না, শুধু সম্ভাব্য এলাকা সম্পর্কে জানা যায়। মোদি সরকার দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, ফোনের সঠিক অবস্থান না জানতে পারার জন্য বিভিন্ন তদন্তকারী এজেন্সিগুলি সমস্যায় পড়ছে। এখন স্মার্টফোনগুলিতে শুধুমাত্র কিছু অ্যাপ ব্যবহারের সময় ‘জিপিএস’ প্রযুক্তি চালু হয়। কিন্তু তার আগে ব্যবহারকারীদের জন্য ফোনে সতর্কবার্তা দেখানো হয়। এই প্রযুক্তি যদি সব সময় চালু থাকে, তাহলে কোন বাড়িতে ফোন রয়েছে, সেটিও দ্রুত বের করে ফেলা সম্ভব। আর এখানেই গোপনীয়তা লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠছে। জিপিএস প্রযুক্তির সাহায্যে একজন ব্যক্তি কখন কোথায় যাচ্ছে, তার উপর প্রতি মুহূর্তে নজরদারি চালানো সম্ভব হবে। স্মার্টফোন নির্মাতাদের একাংশের মতে, জিপিএস প্রযুক্তিকে কখনই নজরদারির জন্য তৈরি করা হয়নি। 

    অ্যাপল ও গুগলের মতে, মোদি সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আদতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এর ফলে সেনাকর্তা, বিচারপতি, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের উপর সহজে যে কেউ নজরদারি চালাতে পারবে। কিছুদিন আগেই সাইবার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে প্রতিটি স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ বাধ্যতামূলক করার নির্দেশিকা জারি করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু ওই অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে বলে অভিযোগ ওঠে। তারপরই ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় মোদি সরকার।
  • Link to this news (বর্তমান)