১০ হাজার টাকা দিয়ে বিহার জিতেই ভোলবদল বিজেপির, রেউড়ি রাজনীতি ক্ষতিকর: নির্মলা
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: এই প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। বিজেপি যখন বিরোধী ছিল, জিএসটির সবথেকে বেশি বিরোধিতা করেছিল তারাই। প্রধানত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আবার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই জিএসটি নিজেরাই চালু করে জয়গান গাইছে। অবস্থান বদলের তালিকা দীর্ঘ। প্রধানমন্ত্রী নিজেই কয়েক বছর আগে বলতেন, রেউড়ি কালচার পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ ভোটে জয়ী হতে রাজ্য সরকারগুলি যেভাবে প্রকল্পের নামে টাকা বিলি করছে, কিংবা নানাবিধ উপহার দিচ্ছে, সেটা অর্থনীতির পক্ষে চরম ক্ষতিকারক। অথচ সেই প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বা দিল্লি—সর্বত্র বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে কোথাও ১৫০০ টাকা, কোথাও আবার ২৫০০ টাকা মহিলাদের ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। সেই প্রবণতারই পুনরাবৃত্তি। সদ্যসমাপ্ত বিহার বিধানসভা ভোটে এনডিএ’র জয়ের অন্যতম কারণ, মহিলাদের ১০ হাজার টাকা অর্থসাহায্য। এই দাবি বিজেপিই করে থাকে। বিহারের ভোটে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই ওই ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন সভা সমাবেশে। বিহারে সরকার গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে এখন সেই মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘টাকাপয়সা বিলি করে ভোটের রাজনীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর প্রবণতা।’ শনিবার এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, ‘যেভাবে বিভিন্ন রাজ্য জনতাকে হাত উপুড় করে উপহার দিচ্ছে, এটা আমাদের কাছে রীতিমতো উদ্বেগের। ঋণ করে ওইসব টাকা দেওয়া হয়। এভাবে তো রাজ্য সরকারগুলি ঋণে ডুবে যাচ্ছে!’ এই উদ্বেগের প্রেক্ষাপট কী? প্রশান্ত কিশোরের একটি অভিযোগ—বিশ্বব্যাংকের থেকে নেওয়া ঋণের ১৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেই মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার করে দিয়েছেন নীতীশ কুমার। ওই টাকা অন্য খাতে ব্যবহারের কথা ছিল। নজর করার মতো বিষয় হল, প্রশান্ত কিশোরের অভিযোগের প্রতিবাদ এপর্যন্ত বিহার সরকার বা কেন্দ্র কেউই করেনি। সে ব্যাপারে কিন্তু স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও নীরব। অথচ শনিবার তিনি কী বললেন? ‘আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে বলেছি, এভাবে ঋণ করে ভোটের উপহার বিলি করবেন না। অর্থনীতি ডুবে যাবে। আমি রাজ্যগুলিকে বলেছি যে, ঋণ কাঠামোর এখনই সংস্কার করা যেতে পারে। কিছু রাজ্য উৎসাহ দেখিয়েছে। বাকিদেরও এটাই করতে হবে। তবে সবার আগে প্রয়োজন ঋণ করে টাকা বিলি বন্ধ করা।’
প্রশ্ন হল, মাত্র এক মাস আগেই যেখানে নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ বিহারের প্রচারে ১০ হাজার টাকা রেউড়ি রাজনীতির জয়গান গেয়েছেন, সেখানে হঠাৎ নির্মলা টাকা বণ্টনের তীব্র বিরুদ্ধাচারণ করছেন কেন? এটা কি নিছক মোদি সরকারের স্ট্র্যাটেজি? নাকি সরকারের অন্দরে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ্যে আসছে?