দিনমজুরের সংসারে ক্যান্সারের থাবা একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বাবা
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, হরিশ্চন্দ্রপুর: অভাব-অনটনের সংসারে দিনমজুরি করে কোনওমতে চলত দু’বেলার খাবার। বাবা-ছেলে দুজন মিলে সংসারের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু সেই সুখের সংসারে নেমে এসেছে ভয়াবহ অন্ধকার। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষনপুর কাঁটাবাড়ি গ্রামের গণপথ রায়ের একমাত্র ছেলে ২৪ বছরের সরন রায় এখন ক্যান্সারের সঙ্গে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। টাকার অভাবে থমকে গিয়েছে চিকিৎসা। দিন দিন যন্ত্রণায় বিষন্ন হয়ে উঠছে তাঁর জীবন। ছেলেকে বাঁচাতে সাহায্যের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন বাবা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মাস আগে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন পরীক্ষা করানোর পর ধরা পড়ে এই দূরারোগ্য ব্যাধি। রোগ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই তাঁদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমানো টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। বাবা দিনমজুরি করে প্রতিদিন যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসারের খাবার জোটে কষ্টে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যান্সারের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবু ছেলেকে বাঁচাতে বাবা যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চিকিৎসার জন্য ঋণও নিয়েছেন। কিন্তু এখন আর পারছেন না চিকিৎসার খরচ চালিয়ে যেতে। অসহায় পরিবারটির এখন দিন কাটছে অন্যের সহযোগিতায়। কোনওরকম দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা হলেও মিলছে না চিকিৎসার অর্থ।
সরনের বাবা গণপথ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে চাই। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও কার্ডে ছেলের নাম নেই। কোথায় গেলে মিলবে সরকারি চিকিৎসা সেটা জানা নেই। বাস্তুভিটা ছাড়া এক ছটাক জমি নেই। ছেলের পরিবারে রয়েছে তার স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যা। সমাজের সহৃদয় ও মানবিক মানুষদের কাছে আমি হাতজোড় করে সাহায্য চাই।
ছেলের চিন্তায় দিশেহারা মা দুলোবালা রায় বলেন, মালদহ থেকে কিষানগঞ্জ চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব। তিন মাস ধরে এখানে-ওখানে ঘুরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। চিকিৎসা ছাড়া সময় যত গড়াচ্ছে, ততই খারাপ হচ্ছে ছেলের অবস্থা। চোখে অশ্রু নিয়ে সরন বলেন, আমি বাঁচতে চাই। স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব রায় বলেন, আমরা গ্রামবাসীরা মিলে কিছু টাকা সাহায্য করি। সেই সব টাকা টেস্টে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন সরেনের চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার সেটা পরিবারের নেই। তাই রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছি। • নিজস্ব চিত্র।