মোবাইলের নেশা ছাড়াতে গাঁটের টাকায় পড়ুয়াদের বই কিনে দিলেন শিক্ষিকারা
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: মোবাইলের নেশা ছাড়াতে গাঁটের টাকায় খুদে পড়ুয়াদের বই কিনে দিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকারা। শনিবার এফডিআই স্কুলের মাঠে ৩৭তম জলপাইগুড়ি জেলা বইমেলায় ছাত্রীদের হাতে উঠল ঠাকুরমার ঝুলি, ছোটদের রামায়ণ কিংবা হাঁদা ভোঁদা। নতুন বইয়ের গন্ধে বুঁদ হল জলপাইগুড়ির দেশবন্ধুনগর আর আর দু’নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (গার্লস) পড়ুয়ারা। বইমেলার মাঠে দাঁড়িয়ে স্কুলের শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সামনে তারা শপথ নিল, ‘মোবাইল নয়, বন্ধু হিসেবে বইকে সঙ্গী করব আমরা।’ সরকারি স্কুলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বইমেলার উদ্যোক্তারা।
এদিন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মেয়ে আরাধ্যাকে নিয়ে বইমেলায় এসেছিলেন জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার। স্টলে ঘুরে ঘুরে বাংলা সাহিত্যের লেখক এবং তাঁদের লেখা বইয়ের সঙ্গে মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। বেশকিছু বই কিনে দেন মেয়েকে। প্রত্যেক শিশুর অভিভাবকরা যাতে তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় আসেন, বইয়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের পরিচয় করিয়ে দেন, সেই আহ্বান রাখেন তিনি। বলেন, আমরা ব্লকের সরকারি কর্মীরা মিলে চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়েছি। যদি কোনও পড়ুয়া বই পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখায়, তাকে বইমেলায় নিয়ে এসে পছন্দমতো বই কিনে দেব আমরা।
এদিন ছাত্রীদের নিয়ে বইমেলার স্টলে ঢুঁ মারার ফাঁকে কথা হয় দেশবন্ধুনগর আর আর দু’নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সঙ্গীতা সান্যালের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনকার নতুন প্রজন্ম মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছে। আমরা তাদের মোবাইল আসক্তি কমিয়ে বই পড়ার নেশা ধরাতে চাইছি। সেকারণে স্কুল ছুটির পর ৪০ জন ছাত্রীকে বইমেলায় নিয়ে আসা হয়েছে। একসঙ্গে এত বই ওরা আগে কখনও দেখেনি। নিজেরা উল্টে পাল্টে বইপত্র দেখেছে। যার যেমন পছন্দ, তাদের তেমন বই কিনে দেওয়া হয়েছে।
দেশবন্ধুনগর আর আর দু’নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আরাধ্যা চন্দ বলে, বইমেলায় যে এত আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে, সত্যিই তা আগে বুঝতে পারিনি। নতুন বইয়ের গন্ধ পেলাম। পছন্দের বইও পেলাম। বাড়ি ফিরে অন্য বন্ধুদের বলব, ওরাও যাতে বইমেলায় আসে।
জলপাইগুড়ি জেলা বইমেলা কমিটির কার্যকরী সম্পাদক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলে গিয়েছেন, পড়ুয়াদের বইমুখী করতে হবে। আমরা গাড়ির ব্যবস্থা করে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বইমেলার মাঠে আনার চেষ্টা করছি। তাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি সদর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপ দে বলেন, ৮ ডিসেম্বর থেকে স্কুলে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি, ছাত্রীদের যাতে বইমেলায় নিয়ে আসা যায়।