সেজে উঠবে কপালকুণ্ডলা ও হিজলি সার্কিট, প্রস্তাব রাজ্যে
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: দীঘা, মন্দারমণিতে পর্যটকদের ভিড়ের ঢলকে এবার উপকূল বরাবর কপালকুণ্ডলা এবং হিজলি এলাকার দিকে টানতে তৎপর প্রশাসন। এজন্য দেশপ্রাণ-২ব্লকে ‘দি কপালকুণ্ডলা সার্কিট’ এবং খেজুরি-২ ব্লকে ‘দি হিজলি সার্কিট’ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের কাছে এজন্য ১কোটি ৪০লক্ষ টাকার প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে। কপালকুণ্ডলা সার্কিটের জন্য ৬৬লক্ষ ৬৮হাজার ২৫টাকা এবং হিজলি সার্কিটের জন্য আরও ৭৩লক্ষ ৯২হাজার ১৬২টাকার প্রোজেক্ট ধরা হয়েছে। তাতে অ্যামেনিটি সেন্টার, সাবমার্সিবল পাম্প, বসার জন্য জায়গা, সিঁড়ি সহ আরও নানা কাজ হবে। আসলে দেশপ্রাণ-২ব্লক এবং খেজুরি-২ব্লকের উপকূল এলাকায় পর্যটনে জোর দিতেই এই উদ্যোগ। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলেই দুই এলাকায় ট্যুরিজম সার্কিট তৈরি কাজ শুরু হবে।
জেলা পর্যটন দপ্তরের অফিসার ইন-চার্জ শুভ্র সিংহরায় বলেন, কপালকুণ্ডলা এবং হিজলি সার্কিট গড়া হবে। পরিকাঠামো সাজাতে বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য আমরা ১কোটি ৪০লক্ষ টাকার প্রস্তাব রাজ্যে পাঠিয়েছি।
খেজুরি-২ ব্লকের নিজকসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন হিজলি মসনদ-ই-আলা পর্যটনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। রসুলপুর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি রয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সৈকত, ঝাউবন ঘেরা হিজলির প্রাকৃতিক পরিবেশ নজরকাড়া। শীত হোক কিংবা গরম সারা বছর মানুষজন হিজলিতে বেড়াতে আসেন। শীতের সময় এখানকার ঝাউবনে পিকনিকের আসর বসে। বিশেষ করে বড়দিন কিংবা নতুন বছরে ওই এলাকা যেন মেলার আকার নেয়। এছাড়া, ভারতের প্রথম ডাকঘর, খেজুরির ডাকবাংলো, ইউরোপিয়ানদের সমাধিক্ষেত্র, রাজা রামমোহন রায় এবং দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমুদ্রপথে বিলেতযাত্রা উপলক্ষ্যে তাঁদের পূর্ণাবয়ব মূর্তি পর্যটকদের কাছে আজও অমূল্য সম্পদ। দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে কাদিরাবাড় সি-বিচ বরাবর কাঠের ব্রিজ, উইং ওয়াল, কার পার্কিং, কংক্রিট রোড, অ্যামেনিটি সেন্টার, বাউন্ডারি ওয়াল এবং সাবমার্সিবল পাম্প তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ সমিতির সদস্য তথা শিক্ষক সমুদ্ভব দাস বলেন, জেলা প্রশাসন এই এলাকায় পর্যটনে গুরুত্ববৃদ্ধির জন্য নজর দেওয়ায় আমরা খুশি। ইতিহাস এবং প্রাকৃতির সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর বহু মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। সেজন্য পরিকাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন। আমরা সমিতির পক্ষ থেকেও এনিয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম।
এছাড়াও কপালকুণ্ডলা সার্কিট উপলক্ষ্যে দেশপ্রাণ ব্লকে বাঁকিপুট উপকূল বরাবর পরিকাঠামো সাজানো হবে। এখানে অ্যামিনিটি সেন্টার, সিঁড়ি, রাস্তা, কার পার্কিং এবং পর্যটকদের বসার জায়গা গড়া হবে। গত কয়েকবছর ধরে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠছে বাঁকিপুট সমুদ্র সৈকত। এখানে সমুদ্র কখনও উচ্ছ্বল, আবার কখনও শান্ত। বিস্তীর্ণ বালুতট, ঝাউ ও নানা গাছগাছালিতে ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। শীতকালে বড়দিন কিংবা নিউ ইয়ারে বাঁকিপুটে পিকনিক করার ধুম পড়ে যায়। বাঁকিপুটে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসনও সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিচ্ছে প্রশাসন।
বাঁকিপুট এলাকাকে ঘিরে রয়েছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত কপালকুণ্ডলা মন্দির। রয়েছে লাইট হাউস। অদূরেই রসুলপুর নদী। এই নদীতে নৌকায় আসার পর কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র নবকুমার পথভ্রষ্ট হয়ে দারিয়াপুরের জঙ্গলে এসেছিলেন। সেখানে তিনি কাপালিকের দেখা পেয়েছিলেন। রসুলপুর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পেটুয়াঘাটে রয়েছে বিরাট মৎস্যবন্দর। সেখানে বেড়াতে এসে মৎস্যজীবীদের নানা কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ রয়েছে। রসুলপুর নদীর দু’দিকে খেজুরির হিজলি এবং দেশপ্রাণ ব্লকের কপালকুণ্ডলাকে ঘিরে রাজ্য সরকার পর্যটন পরিকাঠামোয় জোর দিতে চাইছে।