রানাঘাটের মঙ্গলদ্বীপে ২৪লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি কটেজ যেন ভূতুড়ে বাড়ি
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: চারদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। ঢালাও অর্থ ব্যয়ে তৈরি ‘সাজানো বাগান’ যেন শুকিয়ে গিয়েছে। বেহাল অবস্থা মঙ্গলদীপ পর্যটন কেন্দ্রের। সৌজন্যে প্রশাসনের শীতঘুম। যদিও রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বলেন, বর্তমানে মঙ্গলদ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। গতবছর সাতটি ঘর তৈরি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেখানে আলোর ব্যবস্থা, আসবাবপত্র কিছুই নেই। সেগুলি করতে গেলে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে করতে হবে। তাই কিছু সময় লাগছে।
ভাগীরথীর উপর সবুজ সুন্দরী মঙ্গলদ্বীপে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া একাধিক কটেজ চালুর আগেই পরিণত হয়েছে পরিত্যক্ত ভূতুড়ে বাড়িতে। অথচ ক্যালেন্ডার বলছে, মাত্র এক বছরও হয়নি এসব কটেজের বয়স। গঙ্গার পাড় ভাঙনের ফলে ও পলি জমে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছিল মঙ্গলদ্বীপ। গঙ্গার মাঝে তৈরি সেই চরের একপাশে হুগলি এবং অন্য পাশে নদীয়ার রানাঘাট। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই মঙ্গলদ্বীপ নদীয়ার রানাঘাট-১ ব্লকের মানচিত্রে ঠাঁই পায়। পরবর্তীতে এই মঙ্গলদ্বীপকেই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ইকো ট্যুরিজম পার্ক হিসেবে ভিতরে তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন পরিকাঠামো। সেখানেই পর্যটকদের স্বল্প ভাড়ার বিনিময়ে অরণ্যের মাঝে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করতে কটেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় প্রশাসন। সেইমতো সাতটি কটেজ, ক্যান্টিন এবং আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় গতবছর। সব মিলিয়ে যার জন্য আনুমানিক ব্যয় হয়েছে ২৪লক্ষ টাকা। অর্থাৎ একটি বেডরুম ও বাথরুম বিশিষ্ট কটেজের প্রতিটি ঘর পিছু খরচ তিন লক্ষাধিক টাকা। প্রতিটি কটেজের আয়তন ২৪০ স্কোয়ার ফুট।
সূত্রের খবর, গত পর্যটন মরশুমে কাজ চলার জন্য সেই কটেজ ব্যবহার করা যায়নি। মোটামুটি চলতি বছর মার্চের মধ্যেই ঠিকাদার সংস্থার তরফে কটেজগুলি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু তারপর থেকে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দিকে আর কোনও নজরই দেওয়া হয়নি। শীত পড়তেই মঙ্গলদীপ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা গেল, মাত্র এক বছর বয়স না হতেই সাড়ে তিন লক্ষ টাকার এক একটি কটেজ নব্য অবস্থাতেই ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। জানালা, দরজা বেয়ে উঠেছে আগাছা, চারদিকে ঝোপ-ঝাড়। একাধিক কটেজের জানালা খোলা। ভিতরে ঢুকে পড়ছে পোকামাকড় এমনকী সাপও। উন্নয়নের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ কী তবে কেবল দেখনদারি? নবনির্মিত কটেজগুলির দূরবস্থা অন্তত তাই বলছে। প্রসঙ্গত, গঙ্গার গতিপথের মাঝে প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্ট এই ব-দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮০০বিঘা। তার মধ্যেই ১০০বিঘা জমি কাজে লাগিয়ে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। যদিও বর্তমানে সেই পর্যটন পরিকাঠামো শীতকালে একদিনের ডেস্টিনেশন অথবা বনভোজনের জন্যই কেবল উপযোগী। কিন্তু সারা বছর মঙ্গলদ্বীপকে লোক টানার উপযোগী করে গড়ে তুলতে গেলে অনেক পথ পেরতে হবে। স্থায়ী বিদ্যুৎ পরিষেবা না থাকায় বিকল্প বিদ্যুৎ নিয়েও পরিকল্পনা হয়েছে কয়েকপ্রস্থ। কিন্তু নবনির্মিত কটেজগুলির দূরবস্থা থেকেই বোঝা যায় সেই পরিকল্পনা শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। -নিজস্ব চিত্র