• নর্দমা ঘেঁটে মহামূল্যবান সোনালি ধাতু সংগ্রহ করেন মধ্যপ্রদেশের নেহেরারা
    বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অরূপ সরকার, দুর্গাপুর: সোনার দাম যেখানে আকাশছোঁয়া, সেখানে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নালা-নর্দমায় বয়ে চলেছে সোনা! নর্দমা থেকে সেই মহামূল্যবান সোনালি ধাতু সংগ্রহ করতে মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় থেকে আসছেন পুরুষ-মহিলারা। নানা বয়সের পুরুষ-মহিলা দূষিত নর্দমার কালো জলে নেমেই সোনা খুঁজছেন। নর্দমার দুর্গন্ধ, দূষণ থেকে ছড়ানো রোগব্যাধির তোয়াক্কা করেন না তাঁরা।

    পথচলতি কৌতূহলী মানুষ তাঁদের কাজ দেখে অনেকসময় নাক সিঁটকান। কিন্তু কীসের খোঁজে তাঁরা নর্দমার জল ঘেঁটে চলেছেন, সেটা অনেকেরই অজানা। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের স্বর্ণকাররা জানান, ওই সোনা সংগ্রহকারীরা অনেকসময় স্বর্ণকারদের হারিয়ে যাওয়া সোনা পুনরুদ্ধারেও সাহায্য করেন।

    বেনাচিতির দুর্গামন্দির রোডে প্রায় ৬০বছর আগে সোনাপট্টি গড়ে ওঠে। সোনাপট্টির জন্মলগ্ন থেকেই মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী পুরুষ-মহিলারা সোনার খোঁজে দুর্গাপুরে আসছেন। এই সোনা সংগ্রহকারীদের ‘নেহেরা’ বলা হয়। এখন মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় থেকে নেহেরাদের দল বংশপরম্পরায় সোনা সংগ্রহে আসেন। আসানসোল, রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সোনাপট্টিতে ডেরা বাঁধেন তাঁরা। পরিবারের ছোটবড়, পুরুষ-মহিলা সবার জীবিকা সোনার কণা সংগ্রহ করা।

    সোনাপট্টিতে বহু সোনার গয়না তৈরির কারখানা রয়েছে। স্বর্ণকাররা যখন সেখানে বসে সোনারুপোর গয়না তৈরি করেন, তখন সোনার টুকরো ছিটকে যায়। আবার সোনার গুঁড়ো হাওয়ায় উ‌঩ড়ে যায়। সেসব দোকান থেকে রাস্তার ধুলোময়লায় মিশে জলের সঙ্গে নর্দমায় পড়ে। নর্দমায় বালি ও পলি থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সোনার কণা সংগ্রহ করে নেহেরাদের দল। এক-একটি দলে ৮-১০জন করে নেহেরা থাকেন।

    বৃদ্ধা নেহেরা রাজেশ্বরী মন্ডোয়ানী বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা এই পেশায় যুক্ত। সপ্তাহে ৫০০-১৫০০ মিলিগ্রাম, অর্থাৎ এক-দেড় গ্রাম সোনা সংগ্রহ হয়। অপর নেহেরা গঙ্গা মন্ডোয়ানী বলেন, এই কাজে খাটনি রয়েছে। তবে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আয় বেড়েছে।

    স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, নেহেরারা না থাকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতাম। গয়না তৈরির সময় অনেকসময় সোনা হারিয়ে নর্দমায় পড়ে। আমরা নেহেরাদের সাহায্যে সেই সোনা খুঁজে পাই। বিনিময়ে তাঁদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)