• নানুরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি খুনের নেপথ্যে দলেরই কোন্দল
    বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নানুর: শুক্রবার রাতে নানুরে তৃণমূলের বুথ সভাপতিকে কুপিয়ে খুন করা হল। মৃতের নাম রাজবিহারী সর্দার(৫৯)। তাঁর বাড়ি নানুরের থুপসারা অঞ্চলের পাতিসারা গ্রামে। তিনি ওই বুথেরই সভাপতি ছিলেন। ওই রাতে অন্নপূর্ণা মন্দিরের সামনে তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন জখম হন। মৃতের পরিবার খুনের ঘটনায় দলেরই কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে অন্নপূর্ণা পুজোর আয়োজনকে কেন্দ্র করে বচসা হয়। পরে তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    পুলিশ জানিয়েছে, রাজবিহারীবাবু গত কয়েক বছর ধরে বুথ সভাপতি পদে বহাল ছিলেন। গ্রামের যে নাটমন্দিরের সামনে ঘটনাটি ঘটে তার পিছনে বাড়ি নানুর পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ বুদ্ধদেব মেটের। খুনের ঘটনায় কর্মাধ্যক্ষের অনুগামীদের দিকেই আঙুল তুলছে রাজবিহারীবাবুর পরিবার। তৃণমূল সূত্রের খবর, বুথ সভাপতির সঙ্গে বনিবনা হতো না কর্মাধ্যক্ষের অনুগামীদের। যদিও নানুরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, গ্রাম্য বিবাদের জেরে এই ঘটনা। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।

    স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, গ্রামে নবান্ন উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই অন্নপূর্ণা পুজো হয়। বাউল গান ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। তবে, পুজোর আয়োজন ও চাঁদা নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে গ্রামেরই বিবদমান দুই গোষ্ঠী। মৃতের ছেলে মানব সর্দার বলেন, গ্রামের এক ব্যক্তি চাঁদা দিতে অস্বীকার করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই নিয়ে আমাদের সঙ্গে তুমুল গন্ডগোল হয়। বচসা শেষে আমরা ফিরছিলাম। সেই সময় নাটমন্দিরের কাছে বাবাকে অতর্কিতে শাবল, রামদা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। ছাড়াতে গেলে আমাদেরও কয়েকজনের উপরেও সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওরা বাবাকে একেবারে মেরে ফেলবে, তা কল্পনা করতে পারিনি। 

    ঘটনার খবর পেয়ে নানুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজবিহারীবাবু সহ বাকিদের উদ্ধার করে মঙ্গলকোট হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক রাজবিহারীবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় উত্তপ্ত জেলার রাজনীতি। মৃতের ছেলে মানববাবুর দাবি, তিনি কাজল শেখের লোক। বুদ্ধদেববাবু প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খান তথা ‘কেষ্ট’ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু, পার্টি একটাই। ঝামেলা থাকলেও এরকম নৃশংসভাবে মারবে? যদিও বুদ্ধদেববাবু ফোনে বলেন, ঘটনার দিন আমি গ্রামে ছিলাম না। পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তাই এব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। তবে, বুদ্ধদেববাবু নিজেকে কাজলের অনুগামী বলেই দাবি করেছেন। 

    এবিষয়ে কেরিম সাহেব বলেন, অহেতুক আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। যিনি খুন হয়েছেন এবং যে মেরেছে দু’জনেই কাজলের লোক। বুদ্ধদেববাবুকে কাজল শেখই টিকিট দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক মহলের দাবি, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় জেলে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। তখনই ব্লকের রাশ নিজের হাতে নেন কাজল। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে দল। তাঁর অনুগামীরাই পঞ্চায়েত সমিতির বিভিন্ন স্থায়ী সমিতির পদ পেয়েছিলেন। বিতর্ক এড়িয়ে কাজল সাহেব বলেন, গ্রাম্য বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। ঠিক কী হয়েছিল আমরা তা দলগতভাবে তদন্ত করছি। পুলিশও তদন্ত করছে। দোষীরা কেউ ছাড়া পাবে না।  ঘটনাস্থলে পুলিশি টহল। (ইনসেটে) মৃত রাজবিহারী সর্দার ।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)