‘দিল্লি পুলিশ অত্যাচার করেছে, বিএসএফ জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিল’, ভারতে ফিরে পুশব্যাকের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা শোনালেন সোনালি বিবি
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ ও সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দেশে ফিরে বাংলাদেশে পুশব্যাকের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন বীরভূমের সোনালি বিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওখানে আমি ভালো ছিলাম না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা পাঠালে ভালো খাবার খেতে পেতাম। ওখানকার জেলের খাবার খাওয়া যেত না। তবে জেলে আমাকে কেউ অত্যাচার করেনি।’ তিনি বলেন, ‘দেশ তো দেশই হয়। দিল্লি পুলিশ অত্যাচার করেছে। হাতে পায়ে ধরা সত্ত্বেও বিএসএফ আমাদের জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছিল। আর দিল্লি যাব না।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় মালদহের মহদিপুর স্থলবন্দর দিয়ে সোনালি ও তাঁর ছেলেকে ভারতে পৌঁছে দেয় বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিজিবি। এপারে আসার পর বিএসএফ ক্যাম্প হয়ে রাতেই সোনালিকে মালদহ মেডিকেলে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি এখন অন্তঃসত্ত্বা। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার সেন্টার থেকে হুইলচেয়ারে বেরিয়ে আসেন সোনালি। পাশে ছিল তাঁর আট বছরের ছেলে। সেখান থেকে বীরভূমের পাইকরের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা।
সোনালিকে বরণ করতে দীর্ঘক্ষণ ধরে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশি পাহারায় পাইকরে বাড়ির অদূরে সোনালির অ্যাম্বুলেন্স থামতেই ‘বন্দেমাতরম’, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ওঠে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সামিরুল ইসলামের জন্য বাড়ি ফিরতে পেরেছেন বলে জানান সোনালি। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা রাজ্য পরিযায়ী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান সামিরুল, বিধায়ক মোশারফ হোসেন সহ স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।
ছ’মাসেরও বেশি সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া মেয়ে ও নাতি ফিরছে। তাই এদিন সকাল থেকেই ব্যস্ততা ছিল সোনালির বাপের বাড়িতে। বাঁধাকপির তরকারি ও মুরগির মাংস রান্না করেন তাঁর মা জ্যোৎস্না বিবি। তবে এদিন বাড়িতে ঢোকা হয়নি সোনালির। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামতে চাইলেও শারীরিক কারণেই তাঁকে নিষেধ করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সে উঠে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন জোৎস্না বিবি। সোনালি বলেন, ‘দেশে ফিরে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের দেশে ফেরার ক্ষমতা ছিল না। এটা সম্ভব হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সামিরুল ইসলামের জন্য। তাঁদের ধন্যবাদ। প্রায় আট মাস পর মা ও মেয়েকে দেখলাম। আমার ছেলে হোক বা মেয়ে, ওর নাম যেন মুখ্যমন্ত্রীই রাখেন।’ সোনালির বাবা ভোদু শেখ বলেন, ‘আজ আমাদের খুবই খুশির দিন। তবে বাকি যাঁরা এখনও বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন, তাঁদেরও ফেরানো হোক।’ মা জ্যোৎস্না বিবি বলেন, ‘এতদিন পর মেয়ে ফিরেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!’ সামিরুল সাহেব বলেন, ‘বৈধ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও কোনও নথি যাচাই ছাড়াই বাংলাদেশে ওঁদের পুশব্যাক করেছিল দিল্লি পুলিশ। আমরা প্রথম থেকেই পরিবারের পাশে ছিলাম।’ সোনালির শারীরিক কিছু সমস্যা থাকায় তাঁকে রামপুরহাট মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘ওঁর কিছু শারীরিক সমস্যা থাকলেও এখন সুস্থ আছেন।’ ছবি: পিটিআই