দেশের ‘সাইবার কপ অব দ্য ইয়ার’ লালবাজারের মহিলা ইনসপেক্টর, আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের রহস্যভেদ করে বিশেষ সম্মান
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০১৪ সালে সিনেমার পর্দায় দেখা গিয়েছিল লেডি কপ ‘মর্দানি’কে। ছবিটির মুখ্য চরিত্রে ছিলেন রানি মুখোপাধ্যায়। এক মহিলা পুলিশের আগ্রাসী মনোভাব চমৎকৃত করেছিল দর্শকদের। সিনেমাটি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। পাঁচবছরের মধ্যে ‘মর্দানি ২’ মুক্তি পায়। সিনেমার পর্দায় মুম্বই পুলিসের সিনিয়র ইনসপেক্টর শিবানি শিবাজি ছিলেন নারীসুরক্ষা বেষ্টনীর কড়া প্রহরী।
বাস্তবে এখন অপরাধের শিখরে রয়েছে সাইবার ক্রাইম। সেই অপরাধের তদন্তে নেমে আন্তর্জাতিক এক প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করেন লালবাজারের এক মহিলা অফিসার। তিনি দেশের মধ্যে ‘সাইবার কপ অব দ্য ইয়ার’য়ের তালিকায় ঢুকে পড়লেন। তিনি কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগে কর্মরত। ইনসপেক্টর পদে রয়েছেন। নাম সোমা মাইতি। শহরে ঘটে যাওয়া কোটি টাকার সাইবার প্রতারণার তদন্তে নেমে আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের পান্ডা সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছিলেন তিনি ও তাঁর বিশেষ তদন্তকারী দল। এই সাফল্যের ফলেই বাস্তবের ‘লেডি সাইবার কপ’কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করল ডেটা সিকিওরিটি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা ডিএসসিআই। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে এই সম্মান প্রদান করা হয়েছে লালবাজারের সোমাদেবীকে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর একটি বড়সড় আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছিল লালবাজারের সাইবার থানা। এক কোটি টাকারও বেশি গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। এরপর ডেপুটি কমিশনারের (সাইবার) নির্দেশে একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা এসআইটি তৈরি হয়। সেটির নেতৃত্বে ছিলেন সাইবার বিভাগের ইনসপেক্টর সোমা মাইতি। এছাড়াও দলে ছিলেন আরও তিন ইনসপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার। তদন্তে নেমে সাইবার বিভাগ জানতে পারে সবকটি প্রতারণা সংঘটিত হয়েছে কলকাতা থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে আফ্রিকায়। সেই তথ্য জানার পদ্ধতি সহজ ছিল না। সাইবার বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ভুয়ো আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে প্রতারণাগুলি করা হয়েছিল। তার জেরে সঠিক লোকেশন খুঁজে পেতে প্রায় মাসখানেক ধরে উন্নত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে খোঁজাখুঁজি চালাতে হয়েছে। শেষমেশ চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে। নাইজেরিয়া ও জিম্বাবোয়ের চার ব্যক্তির সন্ধান পান তদন্তকারীরা। কিন্তু সেখানেও টুইস্ট। তারা আফ্রিকা থেকে অপরাধ সংগঠিত করে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে দলটির সরাসরি যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পায় লালবাজার। প্রতি তিনমাস অন্তর কলকাতায় যাতায়াতও করে অভিযুক্তরা। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে সেই তথ্য যাচাই করেন তদন্তকারীরা। তারপর আঁটঘাট বেধে চার মূল অভিযুক্ত সহ ১১ বিদেশিকে গ্রেফতার করে লালবাজারের সাইবার বিভাগের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পান তদন্তকারীরা। দেশের গুপ্ত কিছু তথ্য চুরির ছক কষেছিল ধৃতরা। সে কাজে তারা সফল হলে বিঘ্নিত হতে পারত দেশের নিরাপত্তা। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে সে প্ল্যান বানচাল করে দেন ইনসপেক্টর সোমা ও তাঁর টিম। এই কাজের পর ডেটা সিকিওরিটি কাউন্সিলের তরফে বিশেষ পুরস্কার নিতে ডাক পান তিনি। ডিএসসিআই সূত্রে খবর, ‘ইন্ডিয়া সাইবার কপ অব দ্য ইয়ার’দের একটি ‘ফাইনাল’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সেখানে সরাসরি যোগদান করতে পারবেন লালবাজারের ‘লেডি সাইবার কপ’।-নিজস্ব চিত্র