চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত লাগাতার ‘নজরদারি’, এবার প্রবীণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবে কমিশন
বর্তমান | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বর্ধমান: এবার প্রবীণ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও)। তাও নিয়মিত। যতদিন পর্যন্ত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়। এই নির্দেশ খোদ নির্বাচন কমিশনের। মূলত ৮৫ পেরোনো ভোটারদের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে ফের তাদের বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। উদ্দেশ্য একটাই, সংশ্লিষ্ট ভোটার ‘অক্ষত’ রয়েছেন কি না, তা যাচাই করা। কমিশন জানাচ্ছে, নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরির লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ।
কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করার পর কোনও ভোটারের মৃত্যু হতেই পারে। ৮৫ পেরোলে এই ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তেমন কোনও ঘটনা ঘটলে যাতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগেই ‘আপডেট’ করা যায়, সেই লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ। খসড়া তালিকা প্রকাশ তো বটেই, চূড়ান্ত ইলেক্টোরাল রোল প্রকাশের তিনদিন আগে পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে বিএলওদের। ইতিমধ্যেই অ্যাপে ৮৫ পেরোনো ভোটারদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা ধরে প্রত্যেক প্রবীণ ভোটারের খোঁজ রেখে যেতে হবে বিএলওদের। এই পর্বে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করা কোনও ভোটারের মৃত্যু ঘটে থাকলে অ্যাপের মাধ্যমেই বিএলওদের তা নথিভুক্ত করতে বলেছে কমিশন। পাশাপাশি ভোটার সুস্থ থাকলে, তাও উল্লেখ করতে হবে অ্যাপে। শুধু বিএলওরা নন, এই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে বিএলও সুপার ভাইজারদেরও। বিএলও অ্যাপে ৮৫ বছর বা তার থেকে বেশি বয়সি ভোটারদের পাঠানো ফর্মের তালিকা সংগ্রহ করে তার মধ্যে ভাগাভাগি করে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে হবে সুপারভাইজারদেরও।
কয়েকদিন আগেই বিশেষ রোল পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত পূর্ব বর্ধমানে বৈঠক করতে আসেন। তখন তাঁর কাছে মৃত ভোটারদের নামেও ফর্ম বিলি সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের দাবি, মৃতদের তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগও আছে। তারপরও কেন মৃত ভোটারদের নামে ফর্ম দেওয়া হল? এই প্রেক্ষিতেই ফের মৃত ভোটার যাচাই করতে সাত দফা নির্দেশিকা জারি করেছে কমিশন। সেইসঙ্গে প্রতিনিয়ত বয়স্ক ভোটারদের স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, বিএলওদের পাশাপাশি ইআরওদের বলা হয়েছে, আপনাদের আওতাভুক্ত এলাকায় যেসব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, সেখান থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহ করুন। মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তৎক্ষণাৎ তা আপডেট করতে হবে।
ইতিমধ্যে অবশ্য চর্চা শুরু হয়েছে নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও। কারণ, বর্তমানে ফ্রিজ থাকা ভোটার তালিকা আনফ্রিজ হয়ে যাবে ১৬ ডিসেম্বর খসড়া প্রকাশের পরই। তারপর ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ৬ নম্বর ফর্ম জমা দিতে পারবেন নতুন ভোটাররা। তবে তাঁদেরকেও ওই ৬ নম্বর ফর্মের সঙ্গে একটি ঘোষণাপত্র বা ডিক্লারেশন ফর্ম জমা দিতে হবে। তাতে আবেদনকারীকে তাঁর নাম, ফোন নম্বর, বাবার নাম, মায়ের নাম ও উভয়ের এপিক নম্বর উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও ইনিউমারেশন ফর্মের মতো এই ডিক্লারেশন ফর্মেও সংশ্লিষ্ট ভোটার ২০০২ সালের তালিকায় থাকা এপিক নম্বর, আত্মীয়ের নাম এবং আত্মীয়ের এপিক নম্বর উল্লেখ করতে পারবেন। পাশাপাশি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর কোনও অভিযোগ থাকলে ইআরও, ডিইও এবং সিইও অফিসে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আপত্তি জানানো যাবে। শুনানি ও যাচাইকরণ পর্ব চলবে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।