• পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি, অন্ধকারে চার খুদের ভবিষ্যৎ
    এই সময় | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • হেমাভ সেনগুপ্ত, পাইকর

    চার পুরুষের মাটির বাড়ি। বয়সের ভারে খসেছে দেওয়াল। সেই ঘরে নাতি-নাতনি, ছেলেকে নিয়ে থাকেন ৬০ বছরের জ্যোৎস্না বিবি। বাড়িতেই ফজরের নমাজ পড়ে খুশিতে মন ভরেছিল মেয়ে ফেরার সুখবরে। শনিবার সকাল থেকে বীরভূমের পাইকরের দর্জিপাড়া গলির মোড়ের ভাঙাচোরা খুপড়িতে ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে দেশে ফেরা সোনালি খাতুনের মা জোৎস্না। মায়ের অপেক্ষায় ছিল সোনালির খুদে মেয়ে আফরিনও!

    এ দিন সন্তানসম্ভবা সোনালিকে ভর্তি করানো হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সঙ্গে যান মা জোৎস্না। রুজি রোজগারের টানে তিন দশক আগে দিল্লি যান জোৎস্না। সোনালির বয়স তখন মাত্র ছ'মাস। রোহিণী বস্তিতে কাগজ কুড়িয়ে সংসার চালাতেন সোনালির মা। কয়েক বছর আগে সেখানে গ্রামের ছেলে দানিশ শেখের সঙ্গে পরিচয়। সোনালির সঙ্গে দানিশের বিয়ে দেন তাঁরা।

    মাত্র ছ'মাস আগে বদলে গেল পরিস্থিতি। সন্তানসম্ভবা মেয়ে বাংলাদেশে জেলবন্দি হওয়ার পরে সাত বছরের নাতনি আফরিন ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে বকরি ইদে গ্রামে ফেরেন জ্যোৎস্না। সেই শুরু অপেক্ষার। অবশেষে শুক্রবার দেশে ফেরেন সোনালি। এর মধ্যে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে আফরিনের। দিল্লিতে ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছে সে। কিন্তু মা-বাবা বাংলাদেশে বন্দি হওয়ায় দিল্লির স্কুল আর তাকে ভর্তি নেয়নি। বন্ধ পড়াশোনা। আফরিনের সাফ কথা, 'মা না-এলে আর পড়ব না। মা নেই বলে স্কুল থেকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।'

    একই অবস্থা আফরিনের দাদা সাবির শেখেরও। দিল্লিতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে। মা-বাবার সঙ্গে তাকেও বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। গ্রামের সোনালি খাতুন ও সুইটি বিবিদের বাড়ির দূরত্ব ৫০০ মিটার। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বিত দুই মায়ের কাছে এই দূরত্ব কিছুই নয়। সুইটি ও তাঁর দুই ছেলে সাত বছরের ইমাম ও ১৭ বছরের কুরবান শেখ এখনও বাংলাদেশে আটকে। সুইটির মা নাজিমার আক্ষেপ, 'ওরা ফিরলে এখন স্কুলে কি আর পড়তে নেবে। ওদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হলো।'

  • Link to this news (এই সময়)