• বিভ্রাট চলছেই, ইন্ডিগো-জটে আটকে রোগীরাও
    আনন্দবাজার | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আশ্বাসই সার! শনিবারও ইন্ডিগোর উড়ান পরিষেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটল না। বিলম্বের বিড়ম্বনার পাশাপাশিই চলল উড়ান বাতিলের দুর্ভোগ। যাত্রীদের অনেকেই উড়ান সংস্থার পরামর্শ মেনে সূচি পাল্টে অন্য উড়ানে সফর করতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সূচি অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছেও উড়ান না পাওয়ার ভূরি ভূরি অভিযোগ মিলেছে এ দিন। বহু ক্ষেত্রেই যাত্রীদের অন্ধকারে রেখেই উড়ান বাতিলের অভিযোগ উঠেছে সংস্থার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি, বহু যাত্রীকে কলকাতা থেকে উড়ানের ব্যবস্থা করে দিলেও অন্য বিমানবন্দর থেকে সংযোগকারী উড়ানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি ইন্ডিগো। যাত্রীদের বড় অংশের এমনই অভিযোগ। ফলে, পরিবর্তিত সূচির টিকিট নিয়েও সফর করতে পারেননি বহু যাত্রী। সমস্যার সুরাহা কী, তারও কোনও সদুত্তর সংস্থার কর্মীরা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

    প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাসিন্দা বিশ্বনাথ বসু চোখ, প্রস্টেট, কিডনি-সহ একাধিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তাঁর স্ত্রী কাবেরী বসু স্বামীকে চিকিৎসার জন্য ইন্দোরে ছেলের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথমে শুক্রবারের উড়ান বাতিল হয় তাঁদের। সূচি বদল করে ইন্ডিগো তাঁদের শনিবারের টিকিট দেয়। যদিও এ দিন সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে দুপুর ২টো পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তাঁরা। ২টোর পরে ওই উড়ানও বাতিল হয়েছে বলে জানানো হয় তাঁদের। ফের উড়ানের সূচি বদল করে রবিবার করা হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে। অসুস্থ শরীরে হতাশ বিশ্বনাথ বললেন, ‘‘বার বার বিমানবন্দরে এসে টানা অপেক্ষার পরে এই ভাবে উড়ান বাতিলের খবর শোনা খুব যন্ত্রণার।’’

    একই রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে মিজানুর রহমানের। বৃহস্পতিবার ইন্ডিগোর উড়ানে মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেই উড়ান বাতিল হওয়ায় তাঁকে শুক্রবার বিমানবন্দরে যেতে বলা হয়। রায়পুর হয়ে মুম্বইয়ের উড়ানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা জানানো হয় তাঁকে। কিন্তু শুক্রবার ওই উড়ান বাতিল করা হয়। ফের শনিবার বিমানবন্দরে এসে তিনি জানতে পারেন, কলকাতা থেকে রায়পুরের উড়ান ছাড়বে। কিন্তু, রায়পুর থেকে মুম্বইয়ের উড়ান বাতিল হয়েছে। যা শুনে তাঁর প্রশ্ন, রায়পুরে পৌঁছে তিনি কী করবেন? উড়ান সংস্থার পক্ষ থেকেও এর কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে অভিযোগ। এ দিন মিজানুর বলেন, ‘‘এত দিন সময়ানুবর্তিতার জন্য ইন্ডিগোর উপরে ভরসা রাখতাম। কিন্তু, তাদের পরিষেবার এখন এতই শোচনীয় পরিস্থিতি যে, কেউ কোনও খবরও দিতে পারছেন না।’’

    এ দিন সকালে ৪১টি উড়ান বাতিলের খবর থাকলেও পরের দিকে ওই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। সকালের হিসাব অনুযায়ী, কলকাতায় এসে পৌঁছনোর কথা ছিল, এমন ২১টি এবং কলকাতা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, এমন ২০টি উড়ান বাতিল করা হয়েছে। এ দিন কলকাতা ছাড়াও গুয়াহাটি, আগরতলা, শিলং, আইজ়ল, ইটানগর-সহ বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে কলকাতাগামী উড়ান বাতিল হওয়ায় সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।

    শিলংয়ের এক স্কুলশিক্ষিকা মঞ্জরী পালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরে শেষকৃত্যের জন্য দেহ কলকাতায় নিয়ে আসতে কফিন ভাড়া করেন। কিন্তু অভিযোগ, ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও স্বামীর মরদেহ নিয়ে আসার কোনও ব্যবস্থা করতে পারেননি ওই শিক্ষিকা। তাঁর বক্তব্যের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

    ইন্ডিগোর এই বিভ্রাটের জেরে উড়ানের ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান পরিবহণ মন্ত্রক এ দিন দূরত্ব অনুযায়ী উড়ানের ভাড়া বেঁধে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য সাড়ে সাত হাজার এবং দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বের জন্য সর্বাধিক ১৮ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া যাবে। যদিও, ওই নির্দেশিকার পরে যাত্রীদের কতটা সুরাহা হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকেরই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)