• নিজস্ব পদ্ধতিতেও ভোটার-তথ্য যাচাই কমিশনের
    আনন্দবাজার | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এসআইআরের প্রথম পর্যায়ের (ফর্ম দেওয়া-নেওয়া, ডিজিটাইজ় এবং তথ্য নথিবদ্ধ) কাজের পুনর্যাচাই শুধু এ রাজ্যেই হচ্ছে না। নিজস্ব পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সেই তথ্য যাচাই করছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও। শনিবার সব জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে এই কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল। কমিশন সূত্রের দাবি, এ রাজ্যের যাচাইয়ে যত গরমিল ধরা পড়ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ধরা পড়ছে কমিশনের পদ্ধতিতে। যা প্রধানত ‘সন্দেহভাজন’ ভোটারদের কেন্দ্র করে।

    কমিশন আগেই জানিয়েছিল, মৃত ভোটার যাচাইয়ে তাদের কাছে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া, আধার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর, এলআইসি-সহ একাধিক সংস্থার দেওয়া তথ্য রয়েছে। জেলাশাসকদের উদ্দেশে এ দিন কমিশন যা জানিয়েছে তার সারমর্ম— সেই তথ্যের উপর ভর করে নিজেদের তথ্য যাচাইয়ের প্রযুক্তি (ফ্যাক্ট-চেক) কাজে লাগানো হচ্ছে। সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত কমিশনের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তা এ রাজ্যে ধরা পড়া ‘সন্দেহভাজন’ ভোটার-সংখ্যার থেকে অনেকটা বেশি! এই অংশের মধ্যে থাকতে পারেন মৃত, ঠিকানা বদল, ম্যাপিং না হওয়া, নাম-পদবির মিল না থাকা ভোটাদের একাংশ। সেই তথ্যেরও অবশ্য পুনর্যাচাই হবে। ফলে ১১ ডিসেম্বর খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে কমিশন তাদের তথ্য সামনে আনতে পারে। প্রসঙ্গত, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৫.৪৫ লক্ষ ফর্ম অসংগৃহীত। তার মধ্যে অনুপস্থিতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ। ঠিকানা বদল প্রায় ১.৯৪ লক্ষ।প্রায় ১.২৯ লক্ষ ডুপ্লিকেট এবং মৃত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২৩.৮৩ লক্ষ।

    এত দিন পর্যন্ত আপলোড হওয়া তথ্য ফিরিয়ে (রোল-ব্যাক) এনে ত্রুটি সংশোধন করার কাজে আরও চার দিন সময় পাবেন বিএলও-রা। ১১ ডিসেম্বর এই পর্বের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরে বিএলও-দের সেই সুযোগ আর থাকবে না। জেলা-কর্তাদের একাংশের অনুমান, ১৬ ডিসেম্বর খসড়া প্রকাশের পরে গরমিলের তথ্য সামনে এলে জবাবদিহি করতে হবে বিএলও, বিএলও-সুপারভাইজ়ার বা রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টদের (বিএলএ) একাংশকে। ইচ্ছাকৃত ত্রুটি ধরা পড়লে শাস্তি যে হবে, তা ইতিমধ্যে কমিশন লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি, বিএলও, বিএলএ এবং বিএলও-সুপারভাইজ়ারদের প্রতিটি শংসাপত্রে সই করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাতে দায় এড়িয়ে যাওয়াও মুশকিল হবে। বিএলও-বিএলএ-দের ডেকে গোটা বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশও জেলাশাসকদের দেওয়া হয়েছে। কমিশনের হিসাব, এখনও প্রায় সাড়ে চার লক্ষ ফর্ম সংগ্রহই করা হয়নি। তা যাতে দ্রুত সংগ্রহ করা হয়, দেওয়া হয়েছে সেই বার্তাও।

    কমিশন সূত্রের খবর, খসড়া প্রকাশের দিন এগিয়ে যত আসছে, ততই শুনানি নিয়ে প্রস্তুতির গতি বাড়ছে। স্থির হয়েছে, বিএলও-দের মতো ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) এবং সহকারী ইআরও-দের জন্য তৈরি হবে শুনানির নির্দিষ্ট অ্যাপ। একজন সহকারী ইআরও ৫০টির বেশি ভোটার-ফর্ম নিষ্পত্তি করতে পারবেন না। ফলে এখন থেকে তেমন পদে কত কর্মী লাগবে, সেই তালিকা জানাতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের।

    অন্য দিকে, এ দিনই কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ক্যানিংয়ে মহকুমাশাসক-সহ অন্য সরকারি কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে, ক্যানিংয়ের মাতলা ২ পঞ্চায়েতের থুমকাঠি এলাকায় যায় দলটি। বিএলও-দের কাজ খতিয়ে দেখে প্রতিনিধিদল। কথা বলেন গ্রামের মানুষদের সঙ্গে। পাশাপাশি, মৃত ভোটারদের নাম তালিকা থেকে সঠিক ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হয় তা-ও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)