• নিহত বহু নেতা, আত্মসমর্পণও অনেকের! মাওবাদী নির্মূল অভিযানের মাঝেই প্রথম বার বস্তারে মোবাইল নেটওয়ার্ক
    প্রতিদিন | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাওবাদী দমন অভিযান চলছেই ছত্তিসগড়ের বস্তারে। গত দু’বছরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন বহু মাওবাদী নেতা। অনেকে আত্মসমর্পণও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রথম বার মোবাইল নেটওয়ার্ক ঢুকল বস্তারে!

    দীর্ঘ কাল ধরে মাওবাদী প্রভাবিত বস্তার রেঞ্জ। তার আওতায় মোট সাত জেলা— বস্তার, দান্তেওয়াড়া, বিজাপুর, সুকমা, নারায়ণপুর, কোন্ডাগাঁও ও কাঁকের রয়েছে। বিজাপুরের কোন্দাপল্লি গ্রামে ওই মোবাইল নেটওয়ার্ক বসানো হয়েছে। যা দেখে আপ্লুত গ্রামবাসীরা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ছত্তিসগড় এবং তেলেঙ্গানা সীমান্তে ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে কোন্দাপল্লি গ্রামটি। এতকাল সেখানে না পৌঁছেছে পরিশুদ্ধ পানীয় জল, না বিদ্যুৎ! রাস্তাঘাটের অবস্থাও তথৈবচ। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে মোবাইল টাওয়ার বসানো মানে শুধু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। প্রকারান্তরে এর অর্থ, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে এই প্রথমবার কোন্দাপল্লির যোগাযোগ তৈরি হল।

    স্থানীয় বাসিন্দাদেরও একাংশের বক্তব্য, এতদিন তাঁদের যাবতীয় কাজের জন্য জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গ্রামের বাইরে যেতে হত। মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে আসায় এ বার তাঁদের অনেক কাজই সহজ হয়ে যাবে। বাড়ি বসেই তাঁরা আধার যাচাই, ব্যাঙ্কের কাজ করতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই বলেন, “বস্তারের নতুন করে পথ চলা শুরু হল। এতকাল ধরে এখানকার মানুষের কোনও স্বপ্নই পূরণ হয়নি। এ বার বস্তারের বাস্তবতা বদলাবে। এখানকার মানুষ সরকার প্রকল্পের সুবিধা পাবেন এ বার থেকে।”

    প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদীদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পর থেকেই মাওবাদীদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি বস্তারে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গতি আসে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সাড়ে চারশোরও বেশি মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। তার ৮০ শতাংশেরও বেশি ছত্তীসগঢ়ের ‘রেড করিডর’ বস্তার ডিভিশনের সাতটি জেলায়। চলতি বছরে বস্তারে সিপিআই (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্না, পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকর, রবি ভেঙ্কাটা লক্ষ্মী চৈতন্য ওরফে অরুণা, সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র মাসার মতো শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতা-নেত্রীরা যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ‘নিয়া নার নিয়া পুলিশ’ (আমাদের গ্রাম, আমাদের পুলিশ), ‘লোন ভারাতু’ (গোন্ড ভাষায় যার অর্থ ‘তোমার বাড়ি ফিরে যাও’), ‘নিয়াদ নেল্লানার’ (তোমার ভাল গ্রাম), ‘পুনা মারগেম’-এর মতো পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের প্রবণতাও বাড়ছে মাওবাদীদের।
  • Link to this news (প্রতিদিন)