• খেলতে গিয়ে কয়েন গিলে ফেলছিল কিশোরী, শুধুমাত্র ক্যাথেটার ব্যবহারে অসাধ্য সাধন সরকারি হাসপাতালে
    ২৪ ঘন্টা | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মনোরঞ্জন মিশ্র: এ যেন অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো ঘটনা। অত্যাধুনিক ডাক্তারি যন্ত্রাংশ ছাড়াই প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে এক কিশোরীর খাদ্যনালীতে আটকে থাকা ২০ টাকার কয়েন বের করলেন পুরুলিয়ার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া।

    জানা যাচ্ছে এক শিশুর সঙ্গে খেলা করতে করতে ২০ টাকার কয়েন মুখে ঢুকে যায় ওই কিশোরীর। মুহুর্তের মধ্যে সেটি খাদ্যনালীতে গিয়ে আটকে যায় । সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের লোকজন কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন পুরুলিয়া গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

    সাধারণভাবে অত্যাধুনিক ডাক্তারি যন্ত্রাংশ দিয়ে ইসোফেগোস্কোপির পদ্ধতির মাধ্যমে ওই কয়েন বার করা হয় । কিন্তু পুরুলিয়া গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ নেই । জেলার বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতে খরচ হতে পারে ৩৫ হাজারেরও বেশি টাকা । যা মধ্যবিত্ত ওই কিশোরীর পরিবারের সাধ্যের বাইরে।  আশপাশের মধ্যে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইসোফেগোস্কোপির মাধ্যমে খাদ্যনালীতে আটকে থাকে কয়েন উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া নিয়ে যাওয়ার যে সময় তাতে ওই কয়েনটি খাদ্যনালী থেকে পাকস্থলীতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে জটিল অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

    এরকম এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিল রোগী। কিন্তু পুরুলিয়া গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া হাল ছাড়তে নারাজ । তাঁর স্মরণে আসে পুরুলিয়ার ভূমিপুত্র ডাঃ দেবব্রত দাসের শেখানো প্রাচীন এক চিকিৎসা পদ্ধতির কথা । একপ্রকার ঝুঁকি নিয়েই একটি ইউরিনারি ক্যাথেটার ব্যবহার করে ১০ মিনিটের মধ্যে খাদ্যনালী থেকে কয়েনটি বের করে আনেন তিনি । অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ ছাড়াও বর্তমান যুগে প্রাচীন পন্থা অবলম্বন করে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যে সম্ভব তা প্রমাণ করলেন চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া । ওই চিকিৎসকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পুরুলিয়া গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি ডাঃ সুকমল বিষয়ী। 

    ডা আসফাকুল্লা নাইয়া বলেন, যে পরিস্থিতি যেরকম সরঞ্জাম হাতের কাছে থাকে তা ব্য়বহার আমাদের করতে হয়। যে ভাবে কয়েনটা বের করা হয়েছে তা বেশ পুরনো পদ্ধতি। যখন এন্ডোস্কোপ ছিল না, তখন এই পুরনো মেথড ব্য়বহার করা হত। যে ক্যাথটার ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ইউরিন ক্যাথেটার। ওর শেষপ্রান্তে একটা বাল্ব থাকে যেটা জল কিংবা এয়ার দিলে ফুলে যায়। ওই ক্যাথেটারটা ইসোফেগাসে ঢোকানো হয়। তার পর ওটিকে জল দিয়ে ফোলানো হল তাতে তার টানে কয়েনটি বাইরে চলে আসে। যেসব জায়গায় উন্নত সরঞ্জাম নেই সেখানে এইসব বেসিক জিনিসগুলি ব্যবহার হয়। এতে রিক্সও আছে, তা মাথায় রাখা উচিত। জীবন বাঁচানোর জন্য এটার মনে হয় প্রয়োজন রয়েছে। এটি আমি শিখেছি ডা দেবব্রত দাস স্যারের কাছ থেকে। 

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)