সৌগত গঙ্গোপাধ্যায়,মারগাও: উত্তর গোয়ার বাগা বিচ সংলগ্ন আরপোরা গ্রাম। বিলাসবহুল রিসর্ট, হোটেল—সারা বছরই ঝলমল করে রঙিন সাইনবোর্ড। সঙ্গে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। শনিবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনিতেই এখন ভরা মরশুম। তাই গ্রামের ব্যাকওয়াটার লাগোয়া নাইট ক্লাব ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’-এ আয়োজন করা হয়েছিল বেলি ডান্সের। মধ্যরাত পেরিয়ে চলছিল সেই ‘এনজয়মেন্ট’। সাউন্ড বক্সে গমগম করছে ‘শোলে’র ‘মেহবুবা... মেহবুবা...’। হঠাৎই ছন্দপতন। ফায়ার গান থেকে ডান্স ফ্লোরের একাংশে আগুন। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। মুহূর্তে আগুনের গ্রাসে পুরো নাইট ক্লাব। পুড়ে ও দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু ২৫ জনের। এর মধ্যে চারজন পর্যটক, ১৪ জন নাইট ক্লাবেরই কর্মী। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। প্রাণোচ্ছ্বল এলাকা নিমেষে মৃত্যুপুরী।
প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ছাড়াই ক্লাবটি চলছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে নাইট ক্লাবের জেনারেল ম্যানেজার সহ তিনজনকে। আটক স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানও। পাশাপাশি ক্লাবের মালিক সৌরভ ও গৌরব লুথরার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। যদিও লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও এতদিন কেন নাইট ক্লাবটির বিরুদ্ধে পুলিশ বা প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত। তাঁর গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ক্লাবটির উপরের অংশ কাঠ দিয়ে তৈরি। তার উপর শুকনো নারকেল পাতার ছাউনি। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যাওয়ায় আগুন আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সবচেয়ে বেশি প্রাণ গিয়েছে নাইট ক্লাবের রান্নাঘরে। কারণ, সেটির অবস্থান বেসমেন্টে। সেখান থেকে উপরের ডান্স ফ্লোরে আসার জন্য ছিল মাত্র দু’টি মই। আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার পর রান্নাঘর থেকে আর বেরোতে পারেননি কর্মীরা। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়েই মৃত্যু হয়।
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ রবিবার দুপুরে আরপোরা গ্রামে ঢোকার সময়ও ঘিরে ধরল একরাশ নিঃস্তব্ধতা, নীরবতা। গ্রামজুড়ে গিজগিজ করছে পুলিশ। পুড়ে যাওয়া নাইট ক্লাব তখন পুলিশের কড়া প্রহরায়। কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। এমনকি প্রাথমিকভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয় দক্ষিণ গোয়ার কংগ্রেস সাংসদ ভিরিয়াতো ফার্নান্ডেজকেও। সেই জটলা থেকে হঠাৎই এগিয়ে এলেন স্থানীয় ভিক্টর ডি’কোস্তা। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে তাঁর দাবি, লুথরা ভাই দু’বছর আগে নাইট ক্লাবটি চালু করেন। কিছুদিন আগেই ক্লাবের একাংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে ক্লাবের মালিকদের ‘সুসম্পর্ক’ থাকায় সেই নির্দেশ আর কার্যকর হয়নি।