বাংলার বকেয়া মেটানোর ‘নাটক’ অব্যাহত কেন্দ্রের. গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অতিরিক্ত বরাদ্দেও নাম নেই রাজ্যের
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে বাংলার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নানা সময়ে মৌখিক আশ্বাস মিললেও বকেয়া মেটানো নিয়ে বিশেষ সদিচ্ছা দেখা যায়নি। দিনকয়েক আগেই সংসদে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং বড় মুখ করে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ফের মনরেগায় কাজের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু আর্থিক বকেয়া মেটানোর ইস্যু? তা নিয়ে ‘রা’ কাড়ছে না কেন্দ্র। সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দের হিসেবই সেই সওয়াল খাড়া করছে। সেখানে বাংলাকে মনরেগার টাকা দেওয়ার কোনও উল্লেখই নেই। বকেয়া অর্থ দেবে তো মোদি সরকার? নাকি স্রেফ ‘কলকাতা হাইকোর্টের ১৮ জুনের নির্দেশ পালন করব’ বলেই গাজর ঝুলিয়ে রাখবে? স্পষ্ট করেনি কেন্দ্র। যদিও বকেয়া আদায়ে কেন্দ্রের এই ‘নাটকে’র শেষ দেখে ছাড়বে বলে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল।
চলতি সপ্তাহেই লোকসভায় পাশ হবে সরকারের অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ। ‘সাপ্লিমেন্টারি ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস ২০২৫-২৬।’ ভারতের ভাঁড়ার থেকে নেওয়া হবে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২৬৮ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ মাত্র ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন প্রকল্পে ধার দেওয়ার জন্য এই টাকা খরচ করবে সরকার। বকেয়া মেটানোর নামগন্ধ সেখানে নেই। তাহলে বাংলার ভাগ্যে কি শুধু বঞ্চনাই বরাদ্দ? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
চলতি অর্থবর্ষে ৫০ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল মোদি সরকার। গত এপ্রিল থেকে এই টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফের টাকার দরকার। সেই অতিরিক্ত অর্থ নিতে হলে প্রয়োজন সংসদের সিলমোহর। ‘সাপ্লিমেন্টারি ডিমান্ডস ফর গ্রান্টসে’র মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে সেই অর্থ পেতে সংসদের অনুমোদন নেবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পাশ হবে অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ। সেই নথিতেই দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মনরেগার বকেয়া মেটানোর কোনও উল্লেখ নেই।
দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে ‘ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইনে’র ২৭ ধারা প্রয়োগে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করেছে মোদি সরকার। কেন্দ্রের দাবি মেনে দফায় দফায় দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশ বজায় রেখে সুপ্রিম কোর্টও অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গের ১০০ দিনের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে। ফলে চাপে পড়ে সংসদে সরকার জানিয়েছে, ফের কাজ শুরুর তোড়জোড় চলছে।
যদিও বকেয়া মেটানোর প্রশ্নে কেন্দ্রের জবাব, ২০২২ সালের ৯ মার্চ মোতাবেক রাজ্য পাবে মাত্র ৩ হাজার ৮২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। পালটা রাজ্যের দাবি, এখন বকেয়ার পরিমাণ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্যের হিসেবের ফারাক বিস্তর। আবার অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দে সার্বিক গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের জন্য কেন্দ্রের বাজেট দেড় হাজার কোটি। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের হিসেব যদি মেনে নেওয়া যায়, তাহলে ৩ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল! ‘মনরেগা’ নিয়ে কি মোদির ‘নাটক’ই চলবেই, প্রশ্ন উঠছে।