শীতে জমজমাট ডিসেম্বরের প্রথম উইকএন্ড, ভিড়ের টক্কর চিড়িয়াখানা-ইকোপার্কে
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আম জনতা বলছে, কই তেমন তো মালুম হচ্ছে না! অত হিসেবের প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, এদিন ছিল রবিবার। তাই সকাল থেকেই ভিক্টোরিয়া-চিড়িয়াখানা-রবীন্দ্রসদন চত্বরে ব্যাপক ভিড়। তার উপর এদিন ব্রিগেডে বিশেষ কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য মানুষজন জড়ো হয়েছিলেন। সেই ভিড়ের একাংশ আছড়ে পড়েছিল শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। তবে একথা বলাই যায়, ডিসেম্বরের প্রথম রবিবার থেকেই চিড়িয়াখানা আর ইকো পার্কের মধ্যে জোর টক্কর শুরু হয়ে গেল।
এদিন শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দেড় ডিগ্রি কম। দুপুরের দিকে যেমন চড়া রোদ ছিল, তেমনই মৃদু ঠান্ডা বাতাসও বয়েছে। তার মধ্যেই দুপুরের পর ভিক্টোরিয়া, বিড়লা তারামণ্ডলের বাইরে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। মূলত মফস্সলের মানুষজনই এদিন ভিড় জমিয়েছিলেন শহরের বুকে। ফলে, চটজলদি ঘুরে একটু ফুচকা কিংবা পাপড়িচাটের আনন্দ নিয়েই হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরার তাড়া ছিল তাঁদের মধ্যে। মেদিনীপুরের বাসিন্দা কমল রায়চৌধুরী এসেছিলেন ভিক্টোরিয়ায়। কিন্তু অত লম্বা লাইন দেখে ভিতরে ঢোকার ঝুঁকি নেননি তিনি। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন বাইরে থেকে ভিক্টোরিয়া দেখেই। কাউকে দেখে শহুরে লোক মনে হলেই তাঁর প্রশ্ন, ‘দাদা, কালীঘাট যাব কীভাবে? কতক্ষণ লাগবে?’ তিনি বলছিলেন, ‘মেদিনীপুরে আমার একটা ছোট্ট দোকান আছে। আজ দোকান বন্ধ করেই ছেলেকে নিয়ে বেরিয়েছি। অন্যান্য বছর এগুলি দেখেছি। এবার কালীঘাটে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’
শনি ও রবিবার এইসব এলাকায় ৫০ হাজারের বেশি লোক সমাগম হয়েছে। তার মধ্যে রবিবারই চিড়িয়াখানায় প্রায় ২৪ হাজার মানুষ ঢুকেছেন। তার জেরে বিকেলে ব্যাপক যানজট হয় চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ার প্রবেশ দ্বারের সামনের অংশে। অবৈধ পার্কিং সামলাতে নাকাল হয়েছেন উর্দিধারীরা। এদিন নিউটাউন থেকে চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছিল এক দম্পতি। সঙ্গে তিন বছরের শিশুকন্যা। গৃহকর্তা জানালেন, মেয়ের জন্মের পর থেকে প্রতি বছরই চিড়িয়াখানা ভ্রমণ মাস্ট। এ নিয়ে পরপর তিন বছর চিড়িয়াখানা এলেন তাঁরা। কিন্তু, এই প্রথমবার নাম করে করে চিড়িয়াখানার পশুপাখি দেখেছে তিন বছরের খুদে। গত বছরই কথা ফুটেছে তার। তাই এবার পশুপাখিদের নাম খুদের গলায় শুনে দারুণ অনুভূতি অভিভাবকদের। জমজমাট ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের সামনের উদ্যান। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অনেকের কাছে আবার ভিক্টোরিয়া, ময়দান চত্বর একঘেয়ে। তাই সিংহভাগ মানুষের গন্তব্য এখন ইকো পার্ক। এদিন সেখানেও প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। মূলত উত্তর শহরতলির লোকজন ভিক্টোরিয়া, তারামণ্ডলের দিকে না গিয়ে সটান চলে গিয়েছেন ইকো পার্কে। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি বলছিলেন, ‘ইকো পার্কে জায়গা অনেকখানি। এখানে খুব ভালো সময় কাটানো যায়। রবিবার শীতের দুপুরে সময় কাটানোর জন্য ইকো পার্কের চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না।’