কুমোরটুলিই ভরসা, অসম থেকে জুবিনের ৭০ মূর্তির অর্ডার
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সুকান্ত বসু, কলকাতা: কুমোরটুলির দুর্গার চোখ যেন কথা বলে। এতই জীবন্ত তা। কলকাতার কুমোরটুলির নামডাক এমনি এমনি হয়নি। দুর্গা নয় এই কুশলতার জন্য অন্য কারণে এবার অসমও দ্বারস্থ হল কুমোরটুলির। সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের একাধিক মূর্তি বসবে অসমের বহু জায়গায়। তা বানাতে কলকাতার কুমোরটুলির উপরই ভরসা করলেন অসমের বাসিন্দারা।
ইতিমধ্যেই সদ্যপ্রয়াত শিল্পীর ফাইবারের বেশ কয়েকটি মূর্তি অসম পৌঁছে গিয়েছে। আরও কয়েকটির কাজ চলছে। ১০টির মতো মূর্তি শীঘ্র তৈরির পর বিমানে করে উড়ে যাবে অসম। সবমিলিয়ে ৭০টিরও বেশি মূর্তি তৈরির বরাত এসেছে অসম থেকে। একাধিক শিল্পী অর্ডার পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, ফাইবারের তৈরি সেই সব মূর্তি বসানো হবে অসমের বিভিন্ন রাস্তা, পার্ক ইত্যাদি জায়াগায়। ঠিক কোথায় কোথায় বসবে তা অবশ্য সরকারিভাবে এখনও জানানো হয়নি।
মৃৎশিল্পী রাজা পাল ফাইবারের একটি সাড়ে চারফুটের জুবিনের হাসি হাসি মুখের মূর্তি বানাচ্ছেন। এখন চলছে ফিনিসিং টাচ। ফলে শিল্পী খুব ব্যস্ত। কাজ শেষের পর তা বাক্সবন্দি করে পাঠাবেন অসম। রাজা পাল বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। জুবিনের আরও সাতটি মূর্তির বরাত পেয়েছি।’ শিল্পী সমর পাল, কমল পালদের বক্তব্য, ‘অসমের মানুষের কাছে ওই শিল্পীর প্রতি আবেগ অসীম। তা কাজের বহর দেখে বুঝতে পারছি।’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংগঠনের কর্তা বাবু পাল বলেন, ‘অসমের মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ সেখানকার মানুষ এই মূর্তি তৈরির জন্য কুমোরটুলিকে বেছে নিয়েছেন। কারণ তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে‑এখানকার শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় ওই মূর্তি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।’
এই সময় কুমোরটুলি সাধারণত ঝিমিয়ে থাকে। পুজোর মরশুম শেষ। সরস্বতী পুজোর দেরি আছে। ফলে ব্যস্ততা প্রায় নেই। বহু শিল্পীর হাতে এখন কাজ কম। এ সময় কুমোরটুলি ফাইবারের মূর্তি তৈরি করে। তবে সে সবের বরাতও খুব একটা বেশি আসে এমন না। ফলে কারিগররা চলে যান অন্য কাজে। যে শিল্পীরা বরাত পান তাঁরা ফাইবারের আবক্ষ বা পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করেন। এবার সে তালিকায় সংযোজিত হলেন জুবিন গর্গ। প্রসঙ্গত মনে পড়বে এই কুমোরটুলিতেই স্টুডিও ছিল কিংবদন্তী শিল্পী গোপেশ্বর পালের। যাঁর তৈরি কয়েকটি ধুলোমলিন মূর্তি এখনও রয়ে গিয়েছে স্টুডিওতে। গেলে দেখাও যায়। গোপেশ্বরের মূর্তিগুলি ভালো করে দেখলে মনে হবে গতিশীল কোনও বস্তু। কাঁধে ঝাঁকা নেওয়া ফেরিওয়ালাটি বোধহয় এই হাঁটা শুরু করলেন। গোরুর গাড়িটা এই রওনা দেবে দেবে করছে। স্থিতিশীল নয়, মূর্তিগুলির শরীরজুড়ে যেন কম্পন সঞ্চারিত হচ্ছে। এতটাই জীবন্ত সেগুলি। সেই কুমোরটুলির কাছে অসম থেকে জুবিনের মূর্তি অর্ডার আসবে না তো কার কাছে আসবে? -নিজস্ব চিত্র