• ভাঙা ঘরেই চলে মহিষরেখা শাখা পোস্ট অফিস, ভিতরে সাপ আর বিছের আড্ডা
    বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: খসে পড়েছে পলেস্তারা। টালির চাল তাও আবার ভাঙা। বৃষ্টির জল আটকাতে মাথার উপর টাঙানো কালো পলিথিন। মেঝে শান বাঁধানো নয়, মাটি দিয়ে লেপা মেঝেতে একপাশে ভাঙা চেয়ার, অন্যপাশে একটি বেঞ্চে বসে একমনে কাজ করে চলেছেন পোস্ট মাস্টার। ভিতরে না ঢুকলে বোঝার উপায় নেই যে, এটি শাখা পোস্ট অফিস। এমনই হাল মহিষরেখা শাখা পোস্ট অফিসের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই শাখা পোস্ট অফিস।

    ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নিজস্ব জমিতে অবস্থিত মহিষরেখা শাখা পোস্ট অফিসটি। এক চিলতে ঘরে দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই ডাকঘর। বাগনান ও কুলগাছিয়ার ১১টি গ্রাম এবং জাতীয় সড়কের পাশে থাকা শিল্পাঞ্চলের যাবতীয় চিঠিপত্র, পার্সেল আসা-যাওয়ার ভরকেন্দ্র এই ছোট্ট ঘরটি। ডাককর্মী বলতে রয়েছেন একজন। তিনিই সারাদিন চিঠির বোঝা কাঁধে নিয়ে ছুটে বেড়ান এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। লোকবল কম থাকায় অনেকেই সময়ে চিঠি বা প্রয়োজনীয় প্যাকেট পান না বলে অভিযোগ। ফলে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। 

    এই শাখা পোস্ট অফিসটি দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ক্রমে ভেঙে ভেঙে পড়ছে। টালির চাল বা দেওয়ালের মতো হাল জানালা, দরজারও। একমাত্র চেয়ারটি ভেঙে যাওয়ায় পোস্ট মাস্টারকে বেঞ্চে বসেই কাজ করতে হয়। এমনকি, পোস্ট অফিসের আলো-পাখা চলে অবসরপ্রাপ্ত পোস্ট মাস্টারের বাড়ি থেকে নেওয়া অস্থায়ী কানেকশনে। এই শাখাতেই এর আগে পোস্ট মাস্টার ছিলেন ভানু কর। ৩৩ বছর চাকরি করার পর তিনি এখন অবসর গ্রহণ করেছেন। তাঁর কথায়, এখানে চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আধিকারিক পরিদর্শন করে গেলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০১৫ সালে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির কথা হলেও সেই কাজে কোনও অগ্রগতি নেই। গত জুলাই মাসে ফের মাপজোক হয়েছে, কিন্তু তারপর আর উচ্চবাচ্য নেই। 

    মহিষরেখা শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার দিয়া নায়েক বলেন, অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে মানুষকে পরিষেবা দিতে হচ্ছে। এটি যে সাব পোস্ট অফিস, তার কোনও সাইনবোর্ড নেই। এমনকি, ডেট স্ট্যাম্প পর্যন্ত নেই। মাঝেমধ্যেই ঘরের ভিতর সাপ, বিছে, পোকামাকড় ঢুকে যায়। ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। তাঁর অভিযোগ, একজন ডাককর্মীকে নিয়ে আমাকে পরিষেবা দিতে হচ্ছে। মানুষকে সঠিকভাবে পরিষেবা দিতে হলে অন্তত আরও দু’জন কর্মী প্রয়োজন। এই ভাঙা ঘর নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ডিভিশন অফিস থেকে লোকজন এসে মাপজোক করে গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। আমার বসার কোনও জায়গা নেই। নানা সমস্যার কারণে এখানে কাজ করতে অসুবিধা হয়।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)