২০০২ সালে নাম না থাকা ভোটার ৫০ শতাংশের বেশি? কমিশনের নির্দেশে ফের তথ্য যাচাইয়ে বিএলওরা
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: রাজ্যে শেষ এসআইআর অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। কিন্তু নাম রয়েছে আত্মীয়ের। এবং সেই আত্মীয়ের নাম উল্লেখ করে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন ভোটার। যে সব বুথে এই ধরনের ভোটারের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি, সেসব জায়গায় বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) ফের তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
২০০২ সালের তালিকায় থাকা আত্মীয়ের নাম উল্লেখ করে পূরণ করা ইনিউমারেশন ফর্ম বিএলও অ্যাপে আপলোডের প্রক্রিয়াকে কমিশনের পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোজেনি ম্যাপিং’। আর এই ধরনের ভোটার হলেন প্রোজেনি ভোটার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ হাজার বুথে ‘প্রোজেনি ম্যাপিং’-এর সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ এইসব বুথে ভোটাররা শেষ এসআইআর তালিকায় থাকা আত্মীয় অর্থাৎ বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা এবং দাদু-দিদার (মায়ের বাবা-মা) নাম উল্লেখ করে ফর্ম পূরণ করে বিএলওর কাছে জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট বিএলও তা অ্যাপে আপলোডও করেছেন। এই প্রোজেনি ভোটারদের তথ্যই ফের যাচাই করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। ১১ ডিসেম্বরের মধ্যেই গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদীয়া, দুই দিনাজপুর, দুই ২৪ পরগনার মত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে প্রোজেনি ম্যাপিংয়ের সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি।
কিন্তু কেন ৫০ শতাংশের বেশি প্রোজেনি ম্যাপিং ফের বুথ ভিত্তিক যাচাইয়ের নির্দেশ? সূত্রের খবর, এসআইআর বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখার কাজ হয়ে গিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, দুই তালিকায় ৬৬ শতাংশ ভোটারের মিল রয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যের মোট ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটারের মধ্যে ৫ কোটি ৫ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটারের নাম দুই তালিকাতেই রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতি বুথে ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু ইনিউমারেশন ফর্ম আপলোড হওয়ার পর বিশেষ রোল পর্যবেক্ষকদের নজরে এসেছে, একাধিক বুথে প্রোজেনি ম্যাপিং অস্বাভাবিক হারে বেশি। যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে একটি বুথে ১২৭৮ জন ভোটারের মধ্যে ১১৯৯ জনের নাম ২০০২ সালের তালিকায় নেই। কুলতলিতে ৮৫ নম্বর বুথে ১১৫৪ জন ভোটারের মধ্যে প্রোজেনি ভোটার ১০০২ জন। এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির ১৯৮ নম্বর বুথে ১৪৪৭ জন মোট ভোটারের মধ্যে ১২৬৭ জনের নাম নেই ২০০২ সালের তালিকায়। হিঙ্গলগঞ্জের ১৬২ নম্বর বুথে আবার মোট ৭৭৯ জন ভোটারের মধ্যে ৭০৫ জন আত্মীয়র নাম লিখে ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছেন। অন্যদিকে, উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে ৫৪ নম্বর বুথে ১১১৯ ভোটারের মধ্যে ৯৭৭ জন প্রোজেনি ভোটার। মালদহে ২৮ নম্বর বুথে মোট ৭৯২ ভোটারের মধ্যে ৭২১ জন ভোটারের প্রজেনি ম্যাপিং হয়েছে। হবিবপুরের ৩০ বুথে ৯১৮ জন ভোটারের মধ্যে ৮৩৯ জন ভোটার ফর্মে আত্মীয়ের নাম লিখেছেন। এই তথ্য উঠে আসার পরেই, ৫০ শতাংশের বেশি প্রোজেনি ম্যাপিং হওয়া বুথের তথ্য ফের যাচাইয়ের নির্দেশ।