দক্ষিণ দমদম পুর হাসপাতাল: গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই, আউটডোরে রোগী না দেখেই ফিরে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা
বর্তমান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: দক্ষিণ দমদম পুরসভায় বিভিন্ন কাজে আসা মানুষজন কোথায় গাড়ি কিংবা বাইক বা সাইকেল রাখবেন, তা নিয়ে নিত্য ঝামেলা লেগেই থাকে। এই পার্কিং নিয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের নাজেহাল অবস্থা। এবার পার্কিং সমস্যার শিকার খোদ পুর হাসপাতালের ডাক্তাররা। গাড়ি পার্ক করার জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের আউটডোরে রোগী না দেখেই ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। রোগীদের মধ্যেও ক্ষোভ চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার সিআইসি মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাসপাতালের সামনে পুরসভার পার্কিং লট থেকে শববাহী যান ও অ্যাম্বুলেন্স রবীন্দ্রভবনে সরানো হবে। ফলে কিছুটা জায়গা পাওয়া যাবে। তবে তাতে আদৌ সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
যশোর রোড ও দমদম রোডের সংযোগস্থল নাগেরবাজার শহরের অন্যতম ব্যস্ত মোড়। এখানে বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার মুখে যাত্রীর আশায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে টোটো, অটো। সঙ্গে রয়েছে বাসের দাপটও। ফলে এই মোড় দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভা রয়েছে ঠিক এই জায়গাতেই। পুরসভার ভিতরে যা জায়গা রয়েছে, তাতে চেয়ারম্যান ও সিআইসিদের গাড়ি রাখাই মুশকিল। ফলে সাধারণ নাগরিকরা যাঁরা বিভিন্ন কাজে গাড়ি, বাইক বা সাইকেল নিয়ে পুরসভায় আসেন, তাঁরা বাধ্য হয়েই সেগুলি পার্ক করেন দমদম রোডে। ওই জায়গায় আবার অটোগুলি দাঁড়িয়ে থাকা। এছাড়াও রাস্তার উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি গুমটি। পুরসভার পাশেই হাসপাতাল। আগে অনেকেই পুরসভা ও হাসপাতালের মাঝে গলির মধ্যে বাইক রাখতেন। তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিত্য ঝামেলা হত বাইকচালকদের। ওই গলিতে এখন বাইক রাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডের একদিকে অস্থায়ীভাবে বাইক রাখার কথা বলা হলেও সেখানে কেউই রাখেন না।
হাসপাতালের সামনে পার্কিং লট রয়েছে। সেখানে ডাক্তার, হাসপাতালের কর্মী, পুরসভার অ্যাম্বুলেন্স, শববাহী গাড়ি থাকে। কিন্তু সেখানেও জায়গা কম। দিনে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের আউটডোর চলে। প্রতিদিন কমবেশি ২০ জন ডাক্তার সেখানে বসেন। এছাড়াও রয়েছেন অন্যান্য ডাক্তাররা। তাঁরা নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে আসেন। হাসপাতালে গাড়ি রাখার জায়গা না জুটলে তাঁরা পার্কিং করবেন কোথায়? ফলে একাধিক ডাক্তার রোগী না দেখেই ফিরে যাচ্ছেন।
চিকিৎসা করাতে আসা মধুগড়ের বাসিন্দা তন্ময় ঘোষ বলেন, ডাক্তার দেখানোর জন্য সকাল থেকে বসে আছি। দুপুরে জানানো হলো, এদিন ওই ডাক্তার আসবেন না। এনিয়ে হইচই হলে জানা যায়, ডাক্তার এসেছিলেন, কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গা না পাওয়ায় তিনি ফিরে গিয়েছেন। এক ডাক্তার বলেন, পুর হাসপাতালে রোগী দেখলে যা ফি পাওয়া যায়, তার তুলনায় বাইরে রোগী দেখলে বেশি ফি মেলে। এখানে গাড়ি পার্কিং করাই মূল সমস্যা। জায়গা পেতে হলে অন্তত এক ঘণ্টা নষ্ট হয়। এভাবে কতদিন চলবে?
দক্ষিণ দমদম পুরসভার সিআইসি (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস বলেন, সমস্যার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ঠিক হয়েছে, হাসপাতালের সামনের পার্কিং লট থেকে শববাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সগুলিকে রবীন্দ্রসদনে সরানো হবে। এছাড়া উপায় নেই। আমাদের তো কোথাও পার্কিংয়ের বিকল্প জায়গা নেই। ভবিষ্যতে পুরসভা নিশ্চয়ই স্থায়ী সমাধানের কথা ভাববে।