জনজাতি হিসাবে সুবিধা পাওয়ার জন্য পদবি পাল্টে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন, প্রার্থী হয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনেও, এমনই অভিযোগ উঠল আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনির এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) মাঝে, ওই ব্যক্তির দুই পদবিতে দু’জায়গায় নাম থাকার এই অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক বেধেছে। তবে প্রশাসনের দাবি, তাদের কাছে এখনও এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগজমা পড়েনি।
কালচিনি ব্লকের মেন্দাবাড়ি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ সাতালি এলাকায় চঞ্চল নার্জিনারি এবং লতাবাড়ি পঞ্চায়েতের নেতাজিপল্লি এলাকায় চঞ্চল দাস নামে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে, তাঁরা আসলে একই ব্যক্তি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর একাংশের। নেতাজিপল্লির বাসিন্দাদের অনেকের দাবি, চঞ্চলের প্রকৃত পদবি দাস। তাঁর বাবার নাম সন্তোষ দাস। তিনি ওই এলাকাতেই বড়হয়েছেন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চঞ্চল নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করেন নার্জিনারি পদবিতে।
চঞ্চলের দাবি, সন্তোষ দাস তাঁর জন্মদাতা পিতা। তবে মেন্দাবাড়ি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা দুলাল নার্জিনারি তাঁকে বছর দশেক বয়সে দত্তক নেওয়ায়, তাঁর পদবি বদলে নার্জিনারি হয়। সে পরিচয়েই তিনি ভোটার কার্ড তৈরি করেছেন। তার ভিত্তিতে জনজাতি শংসাপত্রও তৈরি করেন। সে পরিচয়েই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কালচিনি বিধানসভায় নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ভোটে হেরে যান তিনি।
চঞ্চল এমন দাবি করলেও, দুলাল নার্জিনারির বক্তব্য, ‘‘চঞ্চল আমার কোনও আত্মীয় নয়। কী ভাবে ও আমাকে বাবা পরিচয় দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে, জানি না।’’ যদিও চঞ্চল বলেন, ‘‘আমাকে দত্তক নেওয়ার পরেও এখন কেন তিনি তা অস্বীকার করছেন, জানি না। প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘চঞ্চল দাস হিসাবে কোথাও আমি ভোটার তালিকায় নাম তুলিনি। কী ভাবে তা হল, জানি না। বিষয়টি পঞ্চায়েতকে জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
এসআইআর প্রক্রিয়ায় দু’জায়গাতেই চঞ্চল ফর্ম পেয়েছেন, তবে কোনওটিই এখনও পূরণ করে জমা দেননি বলে জানা গিয়েছে। লতাবাড়ি পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের উজ্জ্বল শর্মার দাবি, ‘‘২০১৯ ও ২০১৬ সালের ভোটার তালিকায় চঞ্চল দাসের নাম ছিল। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য তিনিনিজের পদবি পাল্টেছেন। এর আগেও এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম আমরা।’’
কী ভাবে চঞ্চল দ্বিতীয় পদবিতে ভোটার তালিকায় নাম তুললেন বা জনজাতি শংসাপত্র পেলেন, সে বিষয়ে প্রশাসনের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মহকুমাশাসক (আলিপুরদুয়ার) দেবব্রত রায় শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’’