• ব্যাহত পঠনপাঠন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভিডিয়ো-ক্লাসে জোর সংসদের
    আনন্দবাজার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজে বিভিন্ন সরকারি স্কুলের একাধিক শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন বিএলও হিসেবে। তাঁদের অনেকেই এখনও স্কুলে ফিরতে পারেননি। শিক্ষকদের মতে, এর ফলে বিভিন্ন শ্রেণিতে পঠনপাঠন ব্যাহত তো হচ্ছেই, সব চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা। কারণ, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। অথচ, বহু স্কুলে এখনও পাঠ্যক্রম শেষ হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বেশ কিছু বিষয়ের নম্বর বিভাজন পাল্টানোর পরে এখনও মডেল প্রশ্ন প্রকাশ করেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এই পরিস্থিতিতে এক দিকে চতুর্থ সিমেস্টারের পাঠ্যক্রম শেষ করা এবং অন্য দিকে, পড়ুয়ারা যাতে সব প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে, তার জন্য ভিডিয়ো-ক্লাসের উপরে জোর দিচ্ছে তারা।

    সংসদের এক কর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁদের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে চতুর্থ সিমেস্টারের ১৬টি বিষয়ের উপরে প্রায় দেড়শোটি টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো আপলোড করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিকে যোগ হয়েছে বেশ কিছু নতুন বিষয়। কিন্তু সেই সব বিষয় পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই স্কুলগুলিতে। এই সব নতুন বিষয়ের মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স এবং কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের পুরো পাঠক্রমের ভিডিয়ো আপলোড করা হয়েছে। বেশ কিছু ভিডিয়ো রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরেও।

    সংসদের ওই কর্তা বলেন, ‘‘শুধু বাংলা বা ইংরেজিতেই নয়, উত্তরবঙ্গের পড়ুয়াদের কথা ভেবে সেখানে একটি স্টুডিয়ো খোলা হয়েছে। যে হেতু উত্তরবঙ্গের প্রচুর পড়ুয়া নেপালি ভাষায় পরীক্ষা দেয়, তাই চতুর্থ সিমেস্টারের বেশ কিছু বিষয়ের টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো আপলোড করা হয়েছে নেপালি ভাষাতেও।’’

    অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষার জন্য হাতে সময় খুব বেশি নেই। অথচ, সেই তুলনায় ক্লাস হয়নি। তাই নিয়মিত এই ধরনের ভিডিয়ো আপলোড করা হলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের সুবিধাই হবে। তবে, তাঁদের মতে, ভিডিয়োগুলিতে আরও বেশি করে প্রশ্নোত্তর-পর্ব থাকা দরকার। যাতে কোনও পড়ুয়ার মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে সে তার উত্তর পেতে পারে। তা ছাড়া, টিউটোরিয়াল ভিডিয়োগুলি কোথায় দেখা যাবে, সেটা জানে না অনেক পড়ুয়া।

    এ ব্যাপারে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্তা বলেন, ‘‘সংসদের ওয়েবসাইটের নীচের দিকে অনলাইন সাবজেক্ট টিউটোরিয়াল লিঙ্কে ক্লিক করলে এই টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো দেখা যাবে। পাশাপাশি, ইউটিউবে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ লিখলেও পড়ুয়ারা টিউটোরিয়াল ভিডিয়ো দেখতে পারবে।’’

    তবে অনেক পড়ুয়ার মতে, বেশ কিছু বিষয়ে নম্বর বিভাজন পাল্টানোর পরে প্রশ্নের ধরনও পাল্টেছে। সেই অনুযায়ী মডেল প্রশ্ন প্রকাশ করা জরুরি। পাশাপাশি, কত নম্বরের প্রশ্নে কত শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হবে, তার নির্দিষ্ট রূপরেখাও থাকা প্রয়োজন। পরীক্ষার্থীদের একাংশের মতে, পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের জন্য অনধিক ১৫০ শব্দে উত্তর লেখার কথা বলা থাকে। কিন্তু, বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তিত নম্বর বিভাজনে দুই এবং তিন নম্বর প্রশ্নেরও ব্যাখ্যামূলক উত্তর লিখতে হবে। এই দুই এবং তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তর কত শব্দের মধ্যে লিখতে হবে, তা এখনও জানা যায়নি। সুমনা সেনগুপ্ত নামে বাংলার এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘গত বছর পাঁচ নম্বরের প্রশ্নের জন্য ১৫০ শব্দ ধার্য করা হয়েছিল। এক নম্বরের প্রশ্নের জন্য অনধিক ২০ শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে বলা হয়েছিল। এ বার নির্দিষ্ট ভাবে তেমন কিছু বলা হয়নি।’’

    এই প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আশা করা যাচ্ছে, চলতি মাসেই সমস্ত বিষয়ের মডেল প্রশ্ন প্রকাশিত হবে। সেখানে নির্দিষ্ট নম্বরের প্রশ্নের উত্তরের জন্য শব্দ সংখ্যা বলা থাকবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)