দুষ্কৃতীদের কবলে পুরসভার পার্কিং জোন, ‘হাত গুটিয়ে’ পুলিশ
আনন্দবাজার | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
হাওড়া পুরসভার পার্কিং জ়োন দখল করে অবাধে তোলা আদায় করছে দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই সেই সব এলাকা দখলমুক্ত করতে হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তাদের কাছে বার বার আবেদন করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও পুরসভার ১৪টির মধ্যে ৯টি পার্কিং জ়োন দুষ্কৃতীদের খপ্পর থেকে মুক্ত হয়নি। পুর প্রশাসনের দাবি, পুলিশ সহযোগিতা না করায় তাদের বহু লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। যদিও পুলিশ পাল্টা দাবি করেছে, পুরসভার তরফে অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপও করা হয়েছে।
হাওড়া শহর জুড়ে যত্রতত্র পার্কিং নতুন ছবি নয়। এই অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে শহরের বাজার এলাকাগুলিতে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকেরা যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করালেও পুলিশ চোখ বুজে থাকে। আর এরই সুযোগ নিয়ে শাসকদলের মদতপুষ্ট এক দল দুষ্কৃতী ট্র্যাফিক পুলিশের একাংশের সহযোগিতায় বেপরোয়া ভাবে টাকা আদায় করে।
আগে তাদের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পার্কিং জ়োন থেকে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব পেত পুরসভা। দরপত্র ডেকে সংশ্লিষ্ট পার্কিং জ়োনের দায়িত্ব দেওয়া হোত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে। কয়েক বছর আগে সেই সব সংস্থার সঙ্গে পুরসভার চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। অভিযোগ, এর পরে পুরসভা নতুন করে দরপত্র না ডাকায় ওই সংস্থাগুলির একাংশ নিজস্ব বিল ছাপিয়ে পার্কিং ফি আদায় করে সেই টাকা আত্মসাৎ করছিল। ফলে, রাজস্বের টাকা আসছিল না পুর ভাঁড়ারে।
এই সমস্যার মোকাবিলায় চলতি বছরের প্রথম দিকে পুলিশের সাহায্যে ৩৫টি পার্কিং জ়োন নির্দিষ্ট করে পুরসভার পার্কিং দফতর। সেই মতো দরপত্রও ডাকা হয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে তাতে অংশ নিয়ে নির্দিষ্ট টাকা জমা করেছিল মাত্র ১৪টি সংস্থা। ১৬টি জ়োন থেকে কোনও সংস্থা দরপত্রে অংশ নেয়নি। বাকি পাঁচটি পার্কিং জ়োন কেএমডিএ-র অধীনে হওয়ায় তারা পুরসভাকে সেগুলি নিতে সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। ফলে, ওই পাঁচটি জ়োন চলে যায় দুষ্কৃতীদের দখলে।
পুরসভার পার্কিং বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘যে ১৪টি সংস্থা দরপত্রের নিয়ম মেনে পার্কিং জ়োনের দায়িত্ব পেয়েছিল, সেগুলির মধ্যে ন’টি সংস্থাকে পার্কিং ফি আদায় করতে দিচ্ছে না স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। তারা ওই সংস্থার কর্মীদের ভয় দেখিয়ে এলাকাছাড়া করেছে। এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি পুরসভার কাছে টাকা ফেরত চাইছে। আমরা পড়েছি উভয়সঙ্কটে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব পার্কিং জ়োন দুষ্কৃতীরা দখল করে রেখেছে, সেগুলি হল হাওড়া স্টেশন, কলকাতা ও হাওড়া বাস স্ট্যান্ড চত্বর- সহ দিঘা বাস স্ট্যান্ডের সামনের অংশ, নিত্যধন মুখার্জি রোড, রামেশ্বর মালিয়া লেন, টিকিয়াপাড়ার বেলিলিয়াস পার্কের উল্টো দিকের চত্বর, কামারডাঙা এবং কদমতলা। আরও অভিযোগ, ফাঁসিতলা মোড়ে কোনও গাড়িচালক পার্কিং ফি দিতে চাইছেন না। অথচ, সেখানে পণ্যবাহী গাড়ি অবাধে রাখতে অনুমতি দিচ্ছে পুলিশই।
পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কয়েক মাস আগেপুলিশকে লিখিত ভাবেজানিয়েছিলাম, এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তারা যেন পার্কিং জ়োন দখলমুক্ত করে। কিন্তু, আজ পর্যন্ত পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ যদিও পুরসভার এই অভিযোগ মানতে চায়নি হাওড়া সিটি পুলিশ। এক পুলিশকর্তাবলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রস্থানীয় থানাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কয়েকটি পার্কিং জ়োন দখলমুক্ত করা হয়েছে। বাকি পার্কিং জ়োনগুলির ক্ষেত্রেও শীঘ্র সমস্যা মিটে যাবে।’’