ভাইকে টিকা দেওয়ার জন্য দুই বছর অপেক্ষা করেছিলেন বোন। সেই ইচ্ছা অপূর্ণই রয়ে গেল। জানা গিয়েছে, গোয়ার ওই বারে রাঁধুনির কাজ করতেন সুভাষ।
গত শনিবার উত্তর গোয়ার "বার্চ বাই রোমিও লেন" বার-এ হঠাৎই আগুন লেগে যায়। যা দ্রুত পুরো বার গ্রাস করে। ধোঁয়ায় ভরে যায় আশেপাশের এলাকা। আগুনে পুড়ে ও দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ২৫ জনের। যাঁদের মধ্যে ছিলেন বাগডোগরার যুবক সুভাষ।
সুভাষের বাড়ি বাগডোগরা থানা এলাকার বানুদচাটে। তাঁর মৃত্যুর খবর বাগডোগরায় পৌঁছালে গোটা পরিবার শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে। তাঁর মা, মায়া ছেত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পর সুভাষই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। পরিবারের জন্য বাড়ি করার প্রয়োজনে জমি কেনার জন্য তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নিয়েছিলেন।
ঋণ পরিশোধের জন্য, তিনি গোয়াতে থেকে রাঁধুনির কাজ করে টাকা উপার্জন করছিলেন। প্রতি মাসে ঘরে টাকা পাঠাতেন। বড় বোন উর্মিলা ছেত্রী বলেন, "সুভাষ বাড়ি ফিরতে চাইত না। বলত ঋণ শোধ হয়ে গেলেই ফিরে আসবে। ভাই আর এলনা। এল মৃতদেহ।"
সুভাষের বড় বোন উর্মিলা ছেত্রী জানিয়েছেন, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি টাকার ব্যবস্থা করেন এবং মৃতদেহ বাড়িতে আনার জন্য এলাকার একজনকে পাঠান। তবে, কোনও কারণে প্রাথমিক টিকিট বাতিল করা হয়েছিল। পরে, তাদের প্রতিবেশীরা টাকার ব্যবস্থা করেন এবং সুভাষের মৃতদেহ আনতে পরিবারের একজন সদস্যকে পাঠান।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো পরিবারের সঙ্গে সুভাষের গ্রামও ভেঙে পড়েছে। এলাকা জুড়ে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।
হেদমুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শোকাহত পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং তাঁদের সম্ভাব্য সকল সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
গোয়ায় এই বার-এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনায় তাঁদের গ্রামের একজন পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল যুবকের মৃত্যু হল বলেই সুভাষের প্রতিবেশীরা জানান।
বর্ষশেষের উদযাপনে মেতে উঠেছে গোয়া। বার্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাবেও চোখধাঁধানো সজ্জা ছিল। স্ট্র, প্লাস্টিকের পাতা, ফুল, বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল ফ্লোরগুলি।
ডান্স ফ্লোরের উপরে সেই বৈদ্যুতিক আতশবাজি থেকে আগুন লাগে। যা প্রথমে কারও নজরে পড়েনি। ক্রমেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
নিমেষের মধ্যে গোটা নাইটক্লাবে দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। যে জিনিসগুলি দিয়ে নাইটক্লাব সাজানো হয়েছিল, তার জেরেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডটি ঘটেছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নর্থ গোয়ার পানাজি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরপোরা গ্রামে বির্চ বাই রোমিও লেন নাইটক্লাব।
শতাধিক পর্যটক, কর্মীরা ছিলেন শনিবার রাতে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। ডান্স ফ্লোর মাতিয়ে রেখেছিলেন পর্যটকরা। খাবারের আয়োজনেও ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। সেই সময়েই ঘটে বিপত্তি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত একটা নাগাদ দাউদাউ আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডান্স ফ্লোরে। বেশিরভাগ পালিয়ে যান কোনও মতে। পালাতে গিয়েও হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
কারণ, নাইটক্লাবের এক্সিট গেটের পথ অত্যন্ত সরু। যেখান থেকে তাড়াহুড়োতে পালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অন্যদিকে কয়েকজন পর্যটক ও কর্মীরা পালাতে না পেরে নাইটক্লাবের বেসমেন্টে ঠাঁই নেন। সেখানেই দমবন্ধ হয়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরপোরা নদীর পিছনেই ছিল এই নাইটক্লাব। এন্ট্রি ও এক্সিটের পথ ছিল সরু। মূল সড়কের পাশে সরু রাস্তা দিয়ে পৌঁছনো যেত এই 'আইল্যান্ড ক্লাব'-এ।
দমকলের ইঞ্জিন নাইটক্লাব পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। ৪০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েই দমকলের একাধিক ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই বেসমেন্ট থেকে ২৫ জনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও দমকল বাহিনী।