• পরিকল্পনাহীনতায় বিপদ, যাত্রীরা আদালতে যাক: মমতা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সোমবার দুপুরে কলকাতা থেকে দু’দিনের সফরে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দমদম বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে বিমান বিভ্রাট নিয়ে মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন,‘আমার খুব খারাপ লাগছে। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বেশির ভাগ বিমান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ‘ তিনি আরও বলেন, ‘এটা একদম বিপর্যয়। এর জন্য কেন্দ্র দায়ী। তাদের আগে থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হতো। আমার তো মনে হয়, এর জন্য যাত্রীরা আদালতে যেতে পারে।‘

    মমতার আরও বক্তব্য, ‘বিমান বাতিলের পর যাত্রীদের বলা হচ্ছে অন্য পথে যেতে। সেটা কি সম্ভব? বিমানে যেতে ২ ঘণ্টা লাগে, আর ট্রেনে সেই রাস্তাই ২৪ বা ৩৬ ঘণ্টা। তার উপর আবার আগাম টিকিট, রিজার্ভেশনের ব্যবস্থা করতে হয়। সব মিলিয়ে যাত্রীদের জন্য চূড়ান্ত ভোগান্তি। আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সবসময় ভোটের কথা ভাবে আর আমরা ভাবি মানুষের কথা। তাই যাত্রীদের এত সমস্যা নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত।”

    মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ করব, কিছু একটা পরিকল্পনা করুন, যাতে অন্তত অর্ধেক বিমান সচল থাকে। বাকিটা অন্য কিছু ব্যবস্থা করুন। আমি জানি না ওরা  কী করছে। দেশের বিষয়ে তাদের কোনও আগ্রহ নেই। বিজেপি সরকার শুধু তাদের নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। কী ভাবে ভোট, ইভিএম, নির্বাচন কমিশন এবং  সংস্থাগুলিকে নিজেদের দখলে রাখবে, তা নিয়েই ওরা আগ্রহী। কিন্তু ওরা জনগণের কথা ভাবে না। এটাই ওদের প্রধান সমস্যা। আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভাবি। তাই, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।‘

    ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’  বিধিতে ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে ইন্ডিগো। এই নিয়মবিধি মেনে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। তাদের অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমান সংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। ফলে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

    বাস্তব পরিস্থিতির কথা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সবের আগে ১৫-২০ দিন হাতে সময় নিয়ে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে তার পরে করতে হবে। ওরা তো জানত, এটা হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে আমজনতার। এখন আমজনতা ভুগছে। ওরা ভাবছে, কী হয়েছে, হতে দাও! ভোট এলে আমরা ঠিক কিছু না কিছু বলে সামলে নেব। এ ভাবে দেশ চলে না।‘  নাম না-করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও নিশানা করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘বেশি সময় কাটাব দেশের বাইরে গিয়ে। দেশের ভিতরের সমস্যা দেখার কোনও সময় নেই। যে লোকেদের এত দিনের ক্ষতি হল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।‘ ভুক্তভোগী বিমানযাত্রীদের আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

    সোমবারও দিল্লি থেকে ১৩৪টি বিমান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। বেঙ্গালুরু থেকে ১২৭ এবং চেন্নাই থেকে ৭১টি উড়ান বাতিল হয়েছে। কলকাতা, মুম্বই, আহমেদাবাদ, ভাইজ্যাগ-একাধিক বিমানবন্দর থেকেই উড়ছে না ইন্ডিগোর বহু বিমান। এই অবস্থায় পাইলটদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘আমি জানি পরিষেবা ঠিকমতো বজায় রাখতে হলে অনেককে ওভারটাইম করতে হয়। কিন্তু সেটা সমাধান নয়। পাইলটদেরও বিশ্রাম দিতে হবে। তাই জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি রাখা উচিত ছিল।‘
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)