• মেরুদণ্ডে অস্ত্রপচার মানেই পঙ্গুত্ব? ভুল ভাঙালেন অশোকবাবু, মাত্র ৬ সপ্তাহে ফিরলেন নিজের পায়ে...
    ২৪ ঘন্টা | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গত ৩ আগস্ট, ২০২৫। ক্যালেন্ডারের এই তারিখটাই ওলটপালট করে দিয়েছিল অশোক সামন্তের জীবন। ৬৫ পেরোনো মানুষটি এমনিতে বেশ ফুরফুরে, কিন্তু আচমকা উপর থেকে পড়ে গিয়ে পিঠে গুরুতর চোট পান তিনি। প্রথমে মনে হয়েছিল সাধারণ চোট, কিন্তু ক্রমশ তা দুঃস্বপ্নের আকার নেয়। মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন ৬৭ বছরের অশোকবাবু।

    শুরুর দিকে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ এবং ব্রেস ব্যবহার করে চিকিৎসা চললেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। উল্টে এক মাসের মধ্যে কোমরের নিচ থেকে অসাড় হতে শুরু করে, বন্ধ হয়ে যায় মূত্রথলির স্বাভাবিক কাজকর্মও। অথচ দেড় মাসের মাথায় সেই মানুষটিই এখন নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় কার্যত নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি।

    ভুল চিকিৎসায় সময় নষ্ট, বাড়ছিল বিপদ অশোকবাবু ডায়াবেটিক রোগী। পড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় স্তরে যে ‘কনজারভেটিভ’ চিকিৎসা চলছিল, তাতে স্নায়ুর ওপর চাপ কমেনি। ফলে দ্রুত তিনি ‘প্যারাপ্লেজিক’ (Paraplegic) হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকেরা যখন তাঁকে ঢাকুরিয়া আমরি (অধুনা মণিপাল হাসপাতাল)-তে নিয়ে আসেন, তখন তিনি আর নড়াচড়া করতে পারেন না। পরিবারের আশা প্রায় তলানিতে ঠেকেছিল।

    অস্ত্রপচার ও ঘুরে দাঁড়ানো মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ চট্টোপাধ্যায় রোগী দেখার পর দ্রুত এমআরআই (MRI) ও এক্স-রে করান। রিপোর্টে দেখা যায়, মেরুদণ্ডে ‘ডর্সোলম্বার স্পাইন ফ্র্যাকচার’ (AO Type C) হয়েছে, যা অত্যন্ত জটিল এবং স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি করছে। ডা. চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রোগী যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তিনি দেড় মাস ধরে শয্যাশায়ী। ক্যাথেটার লাগানো। হাড় ভেঙে নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ছিল। বাড়ির লোক প্রথমে মেরুদণ্ডের অস্ত্রপচার নিয়ে দোটানায় ছিলেন। কিন্তু আমরা তাঁদের বোঝাই, দ্রুত অস্ত্রপচারই একমাত্র পথ।’’

    সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ‘ডিকম্প্রেশন, স্টেবিলাইজেশন এবং ফিক্সেশন’ সার্জারি করা হয়। অস্ত্রপচারের মাত্র তিন দিন পরেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান অশোকবাবু। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অস্ত্রপচারের ৫ দিনের মাথাতেই তাঁর শরীরে সাড় ফিরতে শুরু করে। আর ৬ সপ্তাহের চেক-আপে যখন তিনি এলেন, তখন সামান্য সাহারা নিয়ে তিনি নিজেই হাঁটছেন।

    ‘ভেবেছিলাম ২-৩ বছর লাগবে’ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পেরে আপ্লুত অশোক সামন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘পায়ে দাঁড়ানোর আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম অস্ত্রপচার হলেও হয়তো সুস্থ হতে ২-৩ বছর লেগে যাবে। কিন্তু মাত্র ৬ সপ্তাহে আমি আবার হাঁটতে পারছি, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। ডাক্তারবাবু এবং হাসপাতালের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

    চিকিৎসকরা আশাবাদী, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন অশোকবাবু। মেরুদণ্ডের চোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যে সেই ভীতি কাটাতে সক্ষম— অশোকবাবুর সেরে ওঠাই তার প্রমাণ।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)