প্রায় বছরখানেক পর কোচবিহার সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিনের সফরে সোমবার প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মমতা। মঙ্গলবার রাসমেলা ময়দানে জনসভা করবেন তিনি। এদিন রবীন্দ্রভবনে প্রশাসনিক বৈঠক থেকেরাজ্য পুলিশের কর্তাদের সতর্ক করলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলেন, 'এত ভীতু হলে চলবে না, মারপিট করতে বলছি না, অ্যাকটিভ হন, নাকা চেকিং করুন, বর্ডার দিয়ে লেনদেন হচ্ছে। যাঁরা বেশি সমালোচনা করে তাঁরাই, তাঁদের ভূমিকাই সঠিক নয়।'
প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই কোচবিহার জেলার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে ডাকযোগে এনআরসি নোটিস পাঠানো হয় গুয়াহাটি থেকে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়বলেন, ‘আমরা কোনও বৈষম্য, ভেদাভেদ মানি না। অনেক রাজবংশীদের অসম থেকে নোটিস ধরানো হয়েছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছি।’ সোনালি খাতুনদের বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ ইস্যুতেও সরব হন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেককে বাংলায় কথায় বলার জন্য বাংলাদেশে পুশব্যাক করছে। লোকাল পুলিশ কী করছে? আপনাদের হাতের নাগাল থেকে কী ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে? এখনও বাংলাদেশে চার জন রয়েছেন। তাঁরা কিন্তু ভারতীয়।’ রাজ্য পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে বিএসএফ কী করে রাজ্যের বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে , কোচবিহারের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই প্রশ্নও তুলেছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
এরপরই রাজ্য পুলিশের কর্তাদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'রাজ্যের যাঁরা অফিসার আছেন তাঁদের বলব, এত ভীতু হলে চলবে না, মারপিট করতে বলছি না, খুন খারাপি করতে বলছি না! প্রো অ্যাক্টটিভ হন। নাকাচেকিং ঠিক করে করুন। প্রচুর লেনদেন হচ্ছে বর্ডার দিয়ে। যাঁরা বেশি সমালোচনা করে তাঁরাই, তাঁদের ভূমিকাই সঠিক নয়।’ নাম না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতরের আওতাধীন সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)-এর সমালোচনাও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, ‘অন্য রাজ্য থেকে এসে আমার রাজ্য থেকে কাউকে যাতে গ্রেফতার করে নিয়ে না যায়, তা দেখতে হবে পুলিশকে। ক্রিমিনালকে নিতে এলে আগে রাজ্যকে জানান। কাউকে চোর বলার আগে দেখতে হবে, সে চোর বা দুষ্কৃতী কি না।’ এ ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কোনও ক্রিমিনালকে অ্যারেস্ট করতে হলে স্টেট গর্ভমেন্টের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা নিশ্চয়ই ক্রিমিনালদের অ্যালাউ করব না। কিন্তু সাধারণ মানুষ আর ক্রিমিনাল এক নয়। কাউকে ক্রিমিনাল দাগিয়ে দেওয়ার আগে দেখতে হবে যে সে ক্রিমিনাল কি না।'
রাজ্য পুলিশকে 'সাহসী' হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বাংলায় কথা বললেই সবাইকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোকাল পুলিশরা কী করছেন? আপনাদের হাতের নাগাল থেকে কী করে নিয়ে যাচ্ছে? নাকাচেকিংটা ঠিকমতো করুন। বর্ডার দিয়ে প্রচুর লেনদেন ইধার-উধার হচ্ছে। যাঁরা বেশি সমালোচনা করেন, তাঁরাই এটা খেয়ে যায়! আর দোষ হয় অন্য লোকের। সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার!"