অয়ন শর্মা: ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ( (Partha Chattopadhyay)। বাথরুমে পড়ে গিয়ে বাম হাতে চোট পান তিনি। গত বৃহস্পতিবার, ঘটনাটি ঘটে। ডেকে পাঠানো হয় তাঁর পারিবারিক চিকিৎসককে। এরপর সিদ্ধান্ত হয় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। শনিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর বাম হাতের এক্সরে করাহয়। কিন্তু হাসপাতাল সূত্র খবর তার হাত ভাঙেনি। পুরোপুরি সুস্থ হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় লাগবে,তারপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে তাঁকে।
এর আগে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় সশরীরে কোর্টে হাজিরা না দেওয়ার জন্য জামিন বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারকের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকে যারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছে তাদের নিম্ন আদালতে প্রত্যেক হিয়ারিঙে (SSC Case) হাজিরা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক। এদিন দেখা যায় প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী-সহ একাধিক অভিযুক্ত স্বশরীরে হাজিরা দেননি। বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল পার্থর। কিন্তু আজ সেখানে সশরীরে হাজিরা দেননি পার্থ।
বিচারক তাদের উদ্দ্যেশ করে বলেন প্রত্যেক অভিযুক্তকে হিয়ারিঙে কোর্টে থাকতে হবে। অন্যথা এই কোর্টের পূর্ণ ক্ষমতা আছে হাজিরা না দিলে জামিন বাতিল করে দেওয়ার (Partha Chatterjee Bail)। 'আশা করি আপনারা পচা শামুকে পা কাটবেন না...' হুঁশিয়ারি বিচারকের।
এতে বিচারক বলেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ যাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে হবে। আশাকরি পচা শামুকে পা কাটবেন না।"
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় আজ ব্যাঙ্কশাল কোর্টে শুনানি ছিল। কিন্তু জামিনে বাইরে থাকলেও, আজ সশরীরে আদালতে হাজিরা হননি পার্থ। চার্জশিটে নাম থাকা সত্ত্বেও আদালত কক্ষে হাজির হননি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বাকি অভিযুক্তরাও। তাঁদের অনুপস্থিতিতে রুষ্ট হন বিচার শুভেন্দু সাহা।
পার্থর জামিন:
তিন বছর তিন মাস ১৯ দিন পর ১১ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও, শেষ মাস আটেক কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি আবারও তাঁকে চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে খবর। বৃহস্পতিবার নাকতলার বাসভবন বিজয়কেতনে স্নানঘরে পড়ে গিয়ে বাঁ হাতে আঘাত পান পার্থ। দ্রুত চট্টোপাধ্যায় পরিবারের চিকিৎসককে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। বাড়িতে এসে চিকিৎসক পার্থের চোটের প্রাথমিক শুশ্রূষা করে যান। কিন্তু শুক্রবার হাতের ব্যাথা বেড়ে গেলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন পারিবারিক চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শ মেনেই শুক্রবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে আবার বাইপাসের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুদিন আগেই স্নানঘরে পড়ে গিয়ে পা ভাঙেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ফোন করে পার্থ তাঁর আরোগ্য কামনাও করেন।
চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতের এক্স-রে করেছেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তাঁর বাঁ হাতে গুরুতর চোট লাগলেও, হাড় ভাঙেনি। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ, পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে থাকা দরকার। সেই কারণে তাঁকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে না; আরও কিছুদিন বিশেষ কেবিনে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে।
জেল থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার পর ১১ নভেম্বর বাড়ি ফিরে প্রথম দু'দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেশ সক্রিয় ছিলেন। তিনি তাঁর অনুগামীদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পরিকল্পনাও জানিয়েছিলেন— বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বক্তৃতা করা এবং নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে "বিচার চাইতে" যাওয়া। এই কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি বেহালা পশ্চিমের আম জনতার উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠিও প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে, দল থেকে সাসপেন্ড হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই, ১৩ নভেম্বর থেকে পার্থবাবু নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে নেন। তিনি শুধু তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করেননি, নিজের অনুগামীদের সাথেও সাক্ষাৎ করেননি। আর এই নীরবতার মধ্যেই তিনি বাসভবনের স্নানঘরে পড়ে গিয়ে আহত হন এবং তাঁকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
এদিকে, সম্প্রতি মামলার শুনানিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় অনুপস্থিত থাকায় আদালত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে এ ধরনের গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। বিচারকের পর্যবেক্ষণ ছিল, 'জামিনে থাকা কোনও অভিযুক্ত শুনানির দিনে অনুপস্থিত থাকলে তা একটি গুরুতর বিষয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটলে তাঁর জামিন বাতিল করা হবে।'
উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় দীর্ঘ কারাবাসের পর আদালতের নির্দেশে তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী অসুস্থতার কারণে হাজিরা দিতে না পারার যুক্তি দিলেও, আদালত তা মানতে নারাজ। বিচারকের মতে, শুনানিতে উপস্থিত থাকা অভিযুক্তের দায়িত্ব ও আইনি বাধ্যবাধকতা, এবং অসুস্থতা থাকলে তা আগাম জানানো উচিত ছিল।
আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে আগামী শুনানিতে অবশ্যই পার্থবাবুকে হাজির থাকতে হবে। পাশাপাশি তাঁর জামিনের শর্ত ঠিকমতো মানা হচ্ছে কিনা, সেদিকে আদালত কড়া নজরদারি চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাকেও প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে। এই সমস্ত আইনি ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, যা তাঁর স্বাস্থ্য, গতিবিধি ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে জল্পনা সৃষ্টি করেছে।