সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশবাসীর বিশ্বাস খোয়ানোর মাশুল গুনতে হল দেশের সবচেয়ে বড় বিমান পরিবহণ সংস্থাকে। সরকারকে আক্রমনের অস্ত্র হিসেবে বিরোধীদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে এই ঘটনা। এই অবস্থায়, ইন্ডিগোর একজন অজ্ঞাতনামা কর্মচারীর লেখা একটি খোলা চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ‘সংস্থার আসল পচন শুরু হয় যখন প্রতিভার তুলনায় পদ প্রাধান্য পায়।’ এর পাশাপাশি উঠে এসেছে অহংকার এবং লোভের কথা। ওই কর্মীর দাবি, মাত্র ১৮ হাজার টাকা বেতনে প্রায় তিনজন কর্মীর সমান কাজ করতে হয়। এর কারণ হিসেবে তাঁর দাবি, মুনাফার লোভে সংস্থা কম লোকবল নিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে।
যে চিঠি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন। এই চিঠিতে সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে সমস্যার জন্য। সংস্থার সিইও পিটার এলবার্স এবং সিওও ইসিদ্রো পর্কেরাসের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। এছারাও পত্রবাণে আক্রান্ত, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসন হার্টার, এবং অসীম মিত্র।
শনিবার এলবার্স এবং ইসিদ্রোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ডিজিসিএ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাঁদেরকে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। দেশের নাগরিক এবং সংস্থার কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে লেখা খোলা চিঠিতে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মচারী বলেন, বিমান সংস্থার অভ্যন্তরীণ সমস্যা এখন আর কেবল অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় বরং ‘এটি দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের সমস্যা।’
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমি একজন মুখপাত্র হিসেবে অথবা কর্পোরেট ভাষার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তি নয়, বরং ইন্ডিগোর একজন কর্মচারী হিসেবে লিখছি। যিনি প্রতিটি শিফট, প্রতিটি ঘুমহীন রাত, প্রতিটি অপমান, প্রতিটি কম বেতনের চেক এবং প্রতিটি অসম্ভব কাজের তালিকার মধ্য বেঁচে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাতারাতি কিছুই ঘটেনি। আমরা সবাই যানতাম এটা হবে। ইন্ডিগো একদিনে ভেঙে পড়েনি। এই পতন বছরের পর বছর ধরেই ঘটছে।’
চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ‘২০০৬ সালে সংস্থার শুরুর সময় আমরা কাজ নিয়ে গর্বিত ছিলাম কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা অহংকারী হয়ে পরি। লোভ আমাদের গ্রাস করে।’ চিঠিতে বলা হয়েছে, কর্মীরা বার বার সতর্ক করলেও তাতে কান দেয়নি সংস্থার শীর্ষ কর্তারা। পাশাপাশি, ওই কর্মীর দাবি, অযোগ্যদের পদে বসানোয় এই ঘটনা ঘটেছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘হঠাৎ করে, যারা সঠিক ইমেলও লিখতে পারতেন না তাঁরা ভিপি হতে শুরু করলেন। এর কারণ ভিপি হওয়ার অর্থ ছিল সংস্থার শেয়ার পাওয়ার সুযোগ এবং ক্ষমতা। সেই ক্ষমতাকে ন্যায্যতা দেওয়া হয় কর্মচারীদের উপর চাপ দিয়ে।
উল্লেখ্য, গত ৬ দিন ধরে গোটা জুড়ে বেহাল ইন্ডিগোর পরিষেবা। এই কয়েকদিনে বাতিল হয়েছে সংস্থার কয়েক হাজার উড়ান। বিমানসংস্থার অভ্যন্তরীণ সংকটে ভুক্তভোগী হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ামক সংস্থা (ডিজিসিএ) নোটিস পাঠিয়েছে বিমান সংস্থার সিইও পিটার এলবার্সকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলবার্সের কাছে জবাব তলব করেছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পাইলটদের পর্যাপ্ত ছুটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিল কেন্দ্র। ছুটি সংক্রান্ত নয়া নিয়ম লাগু হওয়ায় কর্মী সংকটেই বেহাল অবস্থায় পড়ে ইন্ডিগোর। নয়া নিয়ম লাগুর বিষয়ে বহু আগে থেকে সংস্থাকে জানানো সত্ত্বেও পদক্ষেপ না করা ইন্ডিগোকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্র।