দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: সামান্য উন্নতি হলেও ইন্ডিগোর উড়ান সমস্যা এখনও মেটেনি। ফলে যাত্রীদের বিশেষ সুরাহা মেলেনি। হয়রানি অব্যাহতই আছে। বিমান বিভ্রাটের জেরে এবার হুলুস্থুলু হল সংসদেও। সোমবার রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নাইডুর জবাবে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে ওয়াকআউট করেছে তৃণমূল, কংগ্রেস, সপা সহ বিরোধীরা। তাদের দাবি, কেন্দ্রের বেসরকারিকরণ নীতির জেরেই এহেন বিমান বিভ্রাটের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। অন্তত এটুকু স্বীকার করে ক্ষমা চাক কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও বিগত কয়েকদিন ধরে সাধারণ বিমান যাত্রীদের হয়রানির যাবতীয় দায় সরাসরি ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছে মোদি সরকার।
সোমবার রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি জানতে চান, প্রযুক্তিগত কারণের জন্য দিল্লিতে সম্প্রতি যে বিমান বিভ্রাট হয়েছিল, সেই একই কারণেই কি একের পর এক ইন্ডিগোর উড়ানও বাতিল হচ্ছে? এরই উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামমোহন নাইডু সাফ জানিয়ে দেন, ইন্ডিগোর ‘ইন্টারন্যাল ক্রাইসিস’ এবং ‘ক্রিউ রোস্টারিং’য়ের সমস্যার কারণেই এই বিভ্রাট হচ্ছে। এর সঙ্গে ‘অটোমেটিক মেসেজ সুইচিং সিস্টেমে’র (এএমএসএস) কোনও সম্পর্ক নেই। এপ্রসঙ্গেই কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী ঘোষণা করেন, এবিষয়কে মোটেও হালকাভাবে দেখা হচ্ছে না। এব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রত্যেক বিমান সংস্থার জন্যই সরকারের এহেন পদক্ষেপ উদাহরণ হয়ে থাকবে। রামমোহন নাইডু জানান, ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ (এফডিটিএল) মেনে চলতে হবে সমস্ত বিমান সংস্থাকেই। বিমান যাত্রী, পাইলট, ক্রু মেম্বারদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্র কোনওরকম আপস করবে না। এব্যাপারে ইতিপূর্বে দফায় দফায় সমস্ত বিমান সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এমনকি আলাদাভাবে ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এদিনের প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যসভার এআইএডিএমকে সাংসদ এম থাম্বিদুরাই জানান, বিমান বিভ্রাটের জন্য তিনি সম্প্রতি প্রায় চার ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে ছিলেন। সাংসদ মিলিন্দ দেওরার ‘পরামর্শ’, কেন এভাবে বিমান বিভ্রাটের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, তার সবিস্তার পর্যালোচনা প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নাইডু বলেন, কেন্দ্র সবরকম পদক্ষেপ করছে। এই বিভ্রাটের সুযোগ নিয়ে অন্য বিমান সংস্থাগুলি যাতে বেশি ভাড়া হাঁকতে না পারে, সেই কারণে দেশজুড়ে বিমান ভাড়ায় ঊর্ধ্বসীমা কার্যকর হয়েছে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, এর কোনও প্রভাব পড়েনি। মাত্রাছাড়া বেশি ভাড়ায় অন্য বিমানের টিকিট কাটতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। নাহলে বিকল্প পরিবহণ খুঁজে নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, বিভ্রাট জারির বিগত কয়েকদিনে প্রায় ছ’লক্ষ পিএনআর বাতিল হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, গত ২১ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ন’লক্ষেরও বেশি বিমান টিকিট বাতিল হয়েছে। ১ ডিসেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাতিল হয়েছে ছ’লক্ষ টিকিট। সবমিলিয়ে বিমান যাত্রীদের ৮২৭ কোটি টাকার রিফান্ড করা হয়েছে। ন’হাজার ব্যাগের মধ্যে সাড়ে চার হাজার ব্যাগ ফেরত দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিল হওয়া প্রতিটি উড়ানের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। আবার যদি ডামাডোলের কারণে এই সময়কালে নিজের টুর পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন, তাহলেও তার অরিজিনাল পেমেন্ট মোডে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।