বাংলা বলায় ভিনরাজ্যে শ্রমিকদের হেনস্তা? অভিষেক-কল্যাণের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল কেন্দ্র
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ভাষার কারণে ভিন রাজ্যে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা? তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, অথবা আটক করা হচ্ছে? সোমবার লোকসভায় এই ইস্যুতেই লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে এ প্রশ্নের উত্তরই দিল না মোদি সরকার। বরং ই-শ্রম পোর্টালে নথিভুক্তদের তালিকা লিখিতভাবে পেশ করে শ্রমমন্ত্রক পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একই তথ্যের চর্বিতচর্বণ করল। পাশাপাশি তুলে ধরা হল সম্প্রতি কার্যকর হওয়া শ্রম কোডের প্রসঙ্গও। তবে এদিন অন্য দলের দুই সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে ১০০ দিনের কাজে বাংলার অতীত সাফল্যের ছবি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে। মোদি সরকারের জবাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছর এবং ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে ‘পার্সন ডে’ তৈরিতে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে ছিল পশ্চিমবঙ্গই।
সাম্প্রতিক অতীতে প্রধানত বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের চরম হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সেই হয়রানি এখনও বন্ধ হয়নি। এদিন লোকসভায় মূলত এপ্রসঙ্গেই লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন দু’জন তৃণমূল সাংসদ। তারই লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় শ্রম রাষ্ট্রমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে জানান, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ইন্টার-স্টেট মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কমেন (রেগুলেশন অব এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড কন্ডিশনস অব সার্ভিসেস) অ্যাক্ট চালু ছিল। এটি বর্তমানে অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশনস (ওএসএইচ) কোড, ২০২০ আইনের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। এই শ্রম কোড আইন পরিযায়ী সহ দেশের সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারীর স্বার্থই সুরক্ষিত করবে। অন্তত ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করলেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি উল্লিখিত শ্রম কোড আইনের আওতায় চলে আসবে।’ শ্রমমন্ত্রক এদিন লিখিতভাবে জানিয়েছে, গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-শ্রম পোর্টালে সারা দেশে মোট ৩১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ১২৯ জন শ্রমিক নাম নথিভুক্ত করেছেন। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই ২ কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ২২৪ জন।
বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্তা নিয়ে কেন্দ্রের জবাব এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে। লোকসভার মতো রাজ্যসভাতেও তৃণমূলের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে মোদি সরকার। এদিন রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলায় চলা এসআইআরে হিন্দু ভোটারদের একাংশের নাম বেআইনিভাবে বাতিলের অভিযোগ করেন দলের সাংসদ মমতা ঠাকুর। শরণার্থী প্রসঙ্গে মতুয়াদের উল্লেখ করে কেন্দ্রের পরিকল্পনাও জানতে চান। সেক্ষেত্রেও জবাব মেলেনি।
লোকসভার দুই ডিএমকে সাংসদ মালাইয়াসরন ডি এবং কালানিধি বীরাস্বামী লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন ১০০ দিনের কাজ নিয়ে। জবাবে কেন্দ্রীয় শ্রম রাষ্ট্রমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে যে পরিসংখ্যান পেশ করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে মনরেগায় পশ্চিমবঙ্গে ৪১ কোটি ৪০ লক্ষ ‘পার্সন ডে’ তৈরি হয়েছে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে তা ছিল ৩৬ কোটি ৪২ লক্ষ। সারা দেশের নিরিখে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।