সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ সংস্থা! কিন্তু সেই সংস্থা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে বিপন্ন হবে গণতন্ত্র, বিপদ হবে সংবিধানের।’ এসআইআর আবহে সোমবার এই ভাষাতেই নিজের উদ্বেগ আর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘গতবার দু’বছর সময় লেগেছিল। হঠাৎ কীসের এত খিদে যে মাত্র দু’মাসের মধ্যে তা সারতে হবে। ভেবে পাই না, কমিশন যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মানুষ বিচার পাবে কোথায়? গণতন্ত্র যদি একপক্ষ হয়ে যায়, তাহলে সেটাকে স্বৈরতন্ত্র বলে! এজেন্সি যদি একতরফা হয়ে যায়, তাহলে সেটাকে আর এজেন্সি বলা যায় না। আমরা চাই সংবিধানের যথাযথ সম্মান।’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ইচ্ছাকৃতভাবেই বিধানসভা ভোটের ঠিক আগের কয়েকমাসকে এসআইআরের জন্য বেছে নিয়েছে, সেই অভিযোগ তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছে করে এই সময়টাকে বাছা হয়েছে, যাতে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু উন্নয়নের কাজটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোনও কাজেই যেন গাফিলতি না হয়, এটা আমাদের সকলকে দেখতে হবে।’ একইসঙ্গে এসআইআরের কাজের সমস্যা ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, ‘অনেক সময় সার্ভার কাজ করে না। যাঁরা বিহার বা উত্তরপ্রদেশে গিয়েছেন কিন্তু সেখানে ভোট দেননি, তাঁদের তো এখানে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে! তাঁদের নাম কেন বাদ যাবে? ১২ তারিখ থেকে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ডেস্ক চালু করা হচ্ছে। কাগজে কোনও অসুবিধা হলে ক্যাম্পে আসুন। এই রাজ্যে সবার সমান অধিকার।’
বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতীয়দের পুশব্যাকেরও তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘কাউকে কাউকে পুশব্যাক করছে। লোকাল পুলিশরা কি করছেন? আপনাদের হাতের তালু থেকে কী করে বেরিয়ে যাচ্ছে? আমরা যে গর্ভবতী মাকে (বীরভূমের সোনালি বিবি) নিয়ে এলাম, তাঁর পরিবারের চারজন এখনও ওপারে। তাঁরা তো ভারতীয় নাগরিক! কাগজপত্র আছে। তারপরও বিএসএফ জোর করে পুশব্যাক করছে। রাজ্যের পুলিশ অফিসারদের এত ভীতু হলে চলবে না। মারপিট করতে বলছি না। প্রো-অ্যাক্টিভ হন। নাকা চেকিং ঠিকমতো করুন। বর্ডার দিয়ে প্রচুর ইধার-উধার হচ্ছে।’ এমনকি নয়া ওয়াকফ আইন প্রসঙ্গে রাজ্যে নানা জল্পনারও অবসান করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘ওয়াকফ নিয়ে অনেক উল্টোপাল্টা কথা হচ্ছে। এটা আইন। আমরা কারও সম্পত্তি কেড়ে নেব, এমনটা ভাবার কারণও নেই। আমরা রাজনীতি পরে করি। আগে মানবিকতা।’
এসআইআর পর্বেই এনআরসি ইস্যুতে কোচবিহারের কয়েকজন বাসিন্দার কাছে অসম সরকারের চিঠি এসেছিল, এদিন তারও সমালোচনা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘রাজবংশী, কামতাপুরী, নস্যশেখ, সংখ্যালঘুদের, তপশিলিদের উপর অত্যাচারটা বেশি হচ্ছে। আমি থাকতে বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প কোনওদিন হতে দেব না।’ মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, ক্রিমিনাল কেস ছাড়া অন্য রাজ্য থেকে এসে বাংলা থেকে কাউকে যেন গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে না পারে, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।