মহশ্মশানে সৎকার ঘাটের করুণ অবস্থা, আবর্জনা পরিষ্কারের দাবি
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপ মহাশ্মশানে অন্তিম ক্রিয়াকর্ম করার ঘাটের বেহাল দশা। ফলে মৃতদেহ দাহ করতে আসা সব শ্মশানযাত্রীদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শ্মশান সংলগ্ন ভাগীরথীর ধারে যে জায়গায় বসে মৃতদেহ শেষকৃত্য সম্পাদনের আগে কিছু পারলৌকিক ক্রিয়াদি হয়, সেই জায়গাটি খুবই আবর্জনাপূর্ণ। এমন পরিস্থিতি যে, সেখানে হাঁটাচলা করাই দুষ্কর। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কেন না ভাগীরথীর তীরবর্তী ওই শ্মশান ঘাট চত্বরে যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে মৃতদেহের সঙ্গে আনা বিছানা, বাঁশ ও ফুলের মালা। এমনকি, পড়ে থাকে মাটির কলসির ভাঙা টুকরোও। যত্রতত্র পড়ে থাকা এসব নোংরা-আবর্জনার কারণে যে কোনও সময় বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায় শ্মশান যাত্রীদের।
নবদ্বীপ মহাশ্মশানে আসা শ্মশান যাত্রীদের দাবি, অবিলম্বে এই ঘাটের সংস্কার করুক কর্তৃপক্ষ যাতে শেষকৃত্যের দিনেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়। স্থানীয় পুরসভার কাউন্সিলার আশিস চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিনই শ্মশানঘাট পরিষ্কার হয়। কিন্তু এই ঘাটে মৃতদেহ দাহ করার সমস্যা আছে। সেকারণে ওই জায়গা পরিষ্কার রাখতে নদী ঘাটের কাছে মৃতদেহ স্নান করানোর আলাদা জায়গা দেওয়া হয়েছে। কিছু মানুষের সচেতনতার অভাবে মাঝেমধ্যে ঘাট চত্বর নোংরা হচ্ছে। যেখানে, সেখানে নোংরা যাতে না ফেলা হয়, সেজন্য বোর্ডও লাগানো আছে। তা সত্ত্বেও কিছু শ্মশানযাত্রী ঘাট চত্বর অপরিষ্কার করে ফেলছেন। আমরা শ্মশান চত্বর পরিষ্কারের পাশাপাশি ওসব আবর্জনা পুড়িয়ে দিই যাতে কাউকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয়। তবুও আমরা এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে নজর দেব।
পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী থানার ধাড়াপাড়া থেকে পড়শির মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়েছিলেন মিলন সাহা। তিনি জানান, নবদ্বীপের মহাশ্মশানে আলো সহ মৃতদেহ রাখার সব ব্যবস্থাই ভালো। সৎকারের আগে শ্মশান সংলগ্ন ভাগীরথীতে শাস্ত্র মতে অন্তিম কিছু ক্রিয়াকর্ম বাকি থাকে। কিন্তু সেই নদী ঘাটের সামনেই যত্রতত্র পড়ে থাকছে নোংরা, আবর্জনার পাশাপাশি মৃতদেহের সঙ্গে আনা বিছানা, বাঁশ, ফুলের মালা। এমনকি, যেখানে সেখানে পড়ে থাকা এসব ফুলের মালার কারণে অবাধে বিচরণ করছে গোরুর দল। অবিলম্বে এই ঘাট সংস্কারের পাশপাশি নজরদারির ব্যবস্থা হোক।
নবদ্বীপ রামসীতা পাড়ার বাসিন্দা পার্বতী বিশ্বাস জানান, পূর্বস্থলীতে আমার এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন। তাঁকে দাহ করতে নবদ্বীপ শ্মশানে আনা হয়েছে। শেষবারের জন্য দেখতে এসেছি। আগে অনেক ময়লা পড়ে থাকত। এখন অনেক কম। আরও পরিষ্কার হলে ভালো হয়।
প্রসঙ্গত, নবদ্বীপ মহাশ্মশানে নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, বনগাঁ সহ দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫ থেকে ৬০টি মৃতদেহ দাহ করা হয়। এখানে মৃতদেহ সৎকারের তিনটি বৈদ্যুতিক চুল্লি সহ একাধিক কাঠের চুল্লি ও সমাধি দেওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। সেইসঙ্গে নদীয়া জেলার অন্যসব এলাকায় মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলেও নবদ্বীপ শ্মশানে এই ব্যবস্থা রয়েছে।