• হরিহরের ঝালমুড়ির ‘খদ্দের’ পাখির দল পসরা সাজালেই ঝাঁকে ঝাঁকে পায়রা, কাক, টিয়া
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অরূপ সরকার, দুর্গাপুর: হরিদাসের বুলবুল ভাজা। টাটকা তাজা। খেতে মজা...। আর সত্যিই যদি বুলবুলির দল সেই ভাজা খায়? বাঙালির আইকনিক অভিনেতা রবি ঘোষ আজ বেঁচে থাকলে দুর্গাপুরের হরিহরকে একবার অন্তত দেখতে আসতেন!  

    দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে রবিবাবুর সেই ‘বুলবুলি ভাজা’র উত্তরসূরি চটপটা, ঘটিগরম কিংবা ঝালমুড়ি বিক্রি করেন হরিহর। তাঁর খদ্দের যত না পথচারী তার চেয়ে ঢের বেশি বুলবুলি, টিয়া, কাক কিংবা পায়রা। একবার ভাজাভুজির পসার পেতে বসলেই হল! ঝাঁকে ঝাঁকে সবাই উড়ে আসে। হরিহরকে ঘিরে কিচিরমিচির করে। ওদের ভাষা বোঝেন হরিহরও। নগদ অর্থের খদ্দের ছেড়ে ভালোবাসার খদ্দেরদের মশালাদার ঝালমুড়ি খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কখনও হাতের চাটুতে রেখে খাওয়ান। আবার ঝাঁক ভারি হলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন। সবার পেট ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত আকাশে ওড়ে না কেউই। নিস্তার পান না হরিহরও। ইদানীং পথচলতি মানুষও তাঁর কাছে ঝালমুড়ি কিনে ওদের ভালোবাসা আদায় করেন। কোভিড মহামারী, লকডাউন থেকেই হরিহরের এমন পক্ষীপ্রেম। 

    দুর্গাপুরের ইন্দো-আমেরিকান মোড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উড়াল পুল। তার নীচে একটি ঠেলা গাড়িতে হরিহরের ঝালমুড়ির দোকান। বাড়ি অবশ্য এমএএমসি টাউনশিপে। লকডাউনে ভিন রাজ্যে কাজ হারিয়ে হরিহর বাংলায় ফিরে আসেন। পেটের টানে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম তেমন বিক্রি-বাটা ছিল না। অনেকটা করে ঝালমুড়ি বেড়ে যেত। সেগুলি পাখিদের খাইয়ে দিতেন। এমনও দিন গিয়েছে একজন ক্রেতাও তাঁর কাছে আসেননি। দিনের শেষে সমস্ত ঝালমুড়ি, কাঁচা ছোলা, মটর পাখিদের খাইয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরতেন। হরিহর বলছিলেন, ‘ওদের খাইয়ে মনে একটা তৃপ্তি পেতাম। তাই বিক্রি হোক বা না হোক, ওরা আমার ঠেলাগাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করলে বেশ ভালো লাগত।’ 

    ভালোলাগা থেকে প্রেম। হরিহরের প্রেমে এখন পাগলপারা পক্ষীকূল। পঞ্চাশের হরিহর দোকান খুললেই দলবেঁধে হাজির। তাঁর ভালোবাসার টানে সংসারও পেতে ফেলেছে উড়ালপুলের আনাচে-কানাচে। ওদের বেশিরভাগই বকবক বকম। এখন হরিহরের ঝালমুড়ির কদর বেশ ভালোই। বিক্রি-বাটাও দুর্দান্ত। মাখানোর সঙ্গে সঙ্গেই শেষ! হরিহরের বিশ্বাস, ‘পায়রা সহ অন্যান্য পক্ষীকূলের আশীর্বাদেই আজ আমার ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। ওরাও সেই লকডাউনের সঙ্গে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিল।’ ক্রেতারাও এখন হরিহরের ঝালমুড়ি বেশ তৃপ্তির সঙ্গে খান। খাওয়ান পাখিদেরও।  

    হরিহর বলছিলেন, ‘পায়রার সংখ্যা প্রচুর সংখ্যক বেড়ে গিয়েছে। শুধু ঝালমুড়িতে ওদের সবার পেট ভরে না। তাই প্রতিদিন দু’ কেজি গম ও চাল দিয়ে থাকি৷ আমার দোকানের ক্রেতারা নিজেরা ঝালমুড়ি ও ছোলা, বাদাম কিনে খান। তাঁরাও ওদের খাওয়াতে পছন্দ করেন।’ রবিবার হরিহরের দোকানে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলেন টুপ্পা সাহা ও পাপাই চক্রবর্তী। তাঁরা বলছিলেন, ‘আমরা কাজের ফাঁকে হরিদার দোকানে আসি। ঝালমুড়ি খাই পায়রা ও পাখিদের খাওয়াই। হরিদাকে দেখেই আমরা অনুপ্রাণিত। অবলা জীবের প্রতি ভালোবাসায় অদ্ভুত এক আনন্দ  পাওয়া যায়।’ 

    বুলবুল ভাজা বিক্রেতা হরিদাস বেঁচে থাকলে একবার অন্তত এই হরিদাকে দেখতে দুর্গাপুর ঘুরে যেতেন!
  • Link to this news (বর্তমান)