• অবিশ্বাস! বুথ সদস্যদের চোখের মণির স্ক্যান চায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, ভুয়ো রিপোর্ট ঠেকাতে ই-বিস্তারকদের নির্দেশ
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: বিজেপির অন্দরমহলে তৈরি হয়েছে অবিশ্বাসের বাতাবরণ। রাজ্যের নেতাদের আর বিশ্বাস করতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ২০২১ সালে ভুয়ো রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল। নির্বাচনের ফল বের হতেই তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, অধিকাংশ বুথে কমিটিই গঠন হয়নি। অথচ খাতায়-কলমে কমিটি গঠনের রিপোর্ট দেওয়া হয়। তাই এবার শুধু নেতাদের মুখের কথা বিশ্বাস করতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বুথের নেতারা সক্রিয় রয়েছেন কি না, তা জানতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিশেষ অ্যাপ এনেছে। তাতে বুথ কমিটির সক্রিয় সদস্যদের চোখের মণি স্ক্যান করে পাঠাতে হবে। মুখমণ্ডলের ছবিও আপলোড করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুথস্তরের নেতাদের ফোন করে সক্রিয়তা যাচাই করবে।

    বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি মণ্ডলে ই-বিস্তারক নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরাই বুথ কমিটির নেতাদের কাছে অ্যাপ নিয়ে যাবেন। মণ্ডলের বিস্তারকদেরও কেন্দ্রীয় নেতারা ফোন করতে শুরু করেছেন। যাঁদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের ‘নট অ্যাকটিভ’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। যাঁরা ফোন তুলছেন, তাঁদের ‘অ্যাকটিভ’ ভোটার বলা হচ্ছে। 

    বিজেপির এক নেতা বলেন, অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হওয়ার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনেও বুথ কমিটি নিয়ে ভুয়ো রিপোর্ট দেয়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অধিকাংশ বুথে কমিটি নেই। এমনকি, হিন্দু প্রভাবিত গ্রামগুলিতেও বিজেপি কমিটি গঠন করতে পারেনি। অথচ খাতায়-কলমে বুথ কমিটি দেখানো হয়েছে। তার খেসারত দলকে দিতে হয়েছে। সেই কারণে এবার ময়দানে নামার আগেই নিজেদের শক্তি পরখ করতে চাইছে নেতৃত্ব। ই-বিস্তারকরা এসআইআরের সময় কেমন কাজ করছেন, সেটাও নেতৃত্ব পর্যলোচনা করছে। নেতাদের অনেকে অবশ্য এই বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার এক নেত্রী বলেন, শীর্ষ নেতৃত্ব নিচুতলার নেতাদের বিশ্বাস করতে না পারলে কাজ এগোবে কীভাবে? প্রতিটি নির্বাচনে কেন্দ্রের নেতারা জেলায় পড়ে থাকেন। কোথাও ভুল রিপোর্ট দেওয়া হলে তাঁদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। 

    তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবু টুডু বলেন, বিজেপিতে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। বাংলার মানুষও ওদের বিশ্বাস করে না। পূর্ব বর্ধমানে ওদের সংগঠন বলতে কিছু নেই। বিধানসভা নির্বাচনে ওরা সব বুথে এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক পাবে না।

    গেরুয়া শিবিরের প্রবীণ নেতা নরেশ কোনার বলেন, বিজেপি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। নেতৃত্ব যা নির্দেশ দেবে, তা মানতে হবে। কোথাও খামতি থাকলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা ধরিয়ে দেবে। এতে অবিশ্বাসের কিছু নেই। তবে বিজেপি সূত্রের খবর, নেতাদের চোখের মণি বা মুখমণ্ডল স্ক্যান করে পোর্টালে আপলোড করার সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন। অনেকেই তাতে অপমানিত বোধ করছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)