ফর্ম জমা না করার নেপথ্যে ভিনরাজ্যের উস্কানি, ধৃত ২, ওড়িশা ও বারিকুল থেকে পাকড়াও, জোরদার তদন্ত
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: মাঝি সরকারের নামে আদিবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বারিকুল থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম ভবেন্দ্র মারাণ্ডি ও সন্তোষ মাণ্ডি। ভবেন্দ্রকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে বাঁকুড়ায় আনা হয়েছে। সন্তোষের বাড়ি বারিকুল থানার রাওতোড়া অঞ্চলে। সোমবার দু’জনকে খাতড়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন। এখনও মাঝি সরকারের নামে আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে এসআইআরের ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ না করা নিয়ে সমানে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। ওই ঘটনায় আরও কয়েকজন সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, আদিবাসীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে বসে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বান্দোয়ান, রানিবাঁধ ব্লক এলাকার আদিবাসীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। একটি এনজিও-র নামে আদিবাসীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। টাকা নিয়ে ওই এনজিও-র সদস্য করা হচ্ছে। এনজিও-র নামের সঙ্গে ‘মাঝি সরকার’ কথাটি যুক্ত রয়েছে। ফলে সরল আদিবাসীরা ওই সংস্থাকে ভারত সরকারের বিকল্প বা সমান্তরাল হিসেবে মনে করছেন। সেভাবেই তাঁদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। ওই সংস্থার কার্ড থাকলে যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে ট্রেন, বাস, বিমানেও চড়া যাবে বলে কেউ কেউ ভুল বোঝাচ্ছে। ফলে আদিবাসীরা ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করতে চাইছেন না। উল্টে তাঁদের কাছে থাকা আধার, প্যানের মতো অন্যান্য সরকারি কার্ড ব্লক প্রশাসনের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এসআইআর প্রায় শেষের পথে। এখনই ফর্ম পূরণ না করলে ভোটার তালিকায় নাম উঠবে না। এর আগে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। এবার বাঁকুড়া পুলিশও কড়া পদক্ষেপ নিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এনজিও-র সদস্য করার জন্য আদিবাসীদের কাছ থেকে ধৃত ভবেন্দ্র তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছিল। কয়েকজনকে অবশ্য হাজার টাকাতেও সে সদস্য কার্ড দিয়েছে। সদস্যপিছু সংস্থার তরফে তাকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা কমিশন দেওয়া হতো। ছত্তিশগড়ে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। পাশাপাশি এরাজ্যের জঙ্গলমহলের দুই জেলায় ভবেন্দ্রর একাধিক এজেন্ট ছড়ানো রয়েছে। ওই এনজিও-র সদস্যপদ সংগ্রহের জন্য এজেন্টরাও কমিশন পেত। কেউ কেউ আবার নিছক বিভ্রান্তির শিকার হয়েও ওই সংস্থার সদস্য হওয়ার জন্য সহনাগরিকদের উৎসাহ দিতেন।
মাঝি সরকারের নামে বারিকুল থানা এলাকার একটি বিতর্কিত জমি সন্তোষ দখল করেছিল বলেও অভিযোগ। ওই জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সেখানে সে ওই এনজিও-র বোর্ড লাগিয়ে দেয়। ঘটনায় পুলিশ কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও প্রশাসনের তরফে রানিবাঁধের ঘটনা নিয়ে তেমন হেলদোল নজরে পড়েনি। গত দু’তিনদিন ধরে আধিকারিকরা কেউ এলাকায় যাননি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আদিবাসীদের ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণে রাজি করানো জরুরি বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে খাতড়া মহকুমা প্রশাসন জানিয়েছে।