কাঁকসার জঙ্গলে অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে ইছাই ঘোষের দেউল, ক্ষোভ
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: কাঁকসার ঘন জঙ্গলের মাঝে রয়েছে ইছাই ঘোষের দেউল। এই স্থাপত্যটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রতি বছর বহু মানুষ দেউল দেখতে আসে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, দেউলের সৌন্দর্য ক্রমশ নষ্ট হতে বসেছে। দেউলের চূড়ায় আগাছা জন্মেছে। পরিষ্কার না করায় আগাছার সংখ্যা বাড়ছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত কাজ শুরু হবে।
কথিত আছে, সেই সময় গৌড়ের সিংহাসনে রাজা দেবপাল। কাঁকসার জঙ্গলঘেরা ত্রিষষ্টিগড়ের সামন্ত রাজা তখন কর্ণ সেন। তাঁর আশ্রিত সোম ঘোষের পুত্র ছিলেন ইছাই ঘোষ। তিনি ত্রিষষ্টিগড়ের মধ্যেই পৃথকভাবে ঢেকুরগড় স্থাপন করে নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ইছাই ঘোষের এই পদক্ষেপ সামন্ত রাজা কর্ণ সেন মেনে নেননি। ফলস্বরূপ দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণ সেন হেরে যান। যুদ্ধজয়ের নিশান হিসেবে সুউচ্চ শিখর দেউল গড়ে তোলেন ইছাই ঘোষ। দেউলটির উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। পুরোটাই ইটের তৈরি। তবে, দেউলে কোনও বিগ্রহ নেই। স্থানীয়রা বলেন, সারা বছর ভিড় থাকলেও শীতের মরশুমে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অজয় নদের পাশে দেউল দেখার পাশাপাশি অনেকেই এখানে পিকনিক করতে ভিড় জমান। কিন্তু দেউলে আগাছা জন্ম নিয়েছে। তা পরিষ্কার করা দরকার। না হলে স্থাপত্যের ক্ষতি হবে। আসানসোল থেকে দেউল দেখতে এসেছিলেন কল্পনা দে। তিনি বলেন, রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে দেউল এবং সংলগ্ন এলাকায় শ্যামরূপা মন্দিরের নাম রয়েছে। কিন্তু দেউল দেখতে এসে হতাশ হলাম। দেউলের উপরে আগাছার সঙ্গে বট-অশ্বত্থ গজিয়েছে। অবিলম্বে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের সংস্কার করা প্রয়োজন। ইতিহাসের শিক্ষক সাহেব মণ্ডল বলেন, দেউলে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বোর্ড লাগানো রয়েছে। স্থানটি সংরক্ষিত। বোর্ডে লেখা আছে, মধ্য অষ্টাদশ শতকে দেউলটি তৈরি হয়েছে। তবে, অনেকের মতে এটি আরও প্রাচীন। কারণ, ইছাই ঘোষের রাজত্বকাল তারও আগে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, দেউলের পাশেই রয়েছে হরিণ ও ময়ূরদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা। সেটিও বর্তমানে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। তবে, এলাকার মূল আকর্ষণ এই দেউলের আগাছা পরিষ্কার করা দরকার। স্থানীয়রা জানান, দেউলকে কেন্দ্র করে দেউল পার্ক গড়ে উঠেছে। সেখানেও বহু মানুষ ভিড় করেন। সংলগ্ন শ্যামরূপা যাওয়ার মন্দিরটি আগে মাটির থাকলেও বর্তমানে নতুন রূপ পেয়েছে। আমূল সংস্কারের ফলে শ্যামরূপা মন্দিরে নিয়মিত ভিড় হচ্ছে। মন্দির দেখার পর অনেকেই দেউল দেখতে আসেন। দেউলের স্থাপত্য যত্নে রাখা না হলে পর্যটনে তার প্রভাব পড়বে। এলাকার ইতিহাস বাঁচাতে ও পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল করতে দেউলের পরিচর্যা দরকার। এবিষয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কালনা সাব সার্কেলের সিনিয়র কনজারভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট অমিত মালো বলেন, প্রতি বছর বর্ষার পরে পরিষ্কার করা হয়। কোর কনজারভেশন করা হবে বলে এবছর পরিষ্কারের কাজ করা হয়নি। কোর কনজারভেশন বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।-নিজস্ব চিত্র