• ‘ইউসি’ এড়িয়েই বিধায়কদের টাকা দেওয়ার দাবি অগ্নিমিত্রার, কেন্দ্র কোন যুক্তিতে টাকা আটকায়, কটাক্ষ তৃণমূলের
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: সরকারি টাকা খরচ করলেই তার হিসেব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বা ইউসির আকারে জমা পড়ে। সেটি জমা করলেই পরবর্তী কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রের ফান্ডের পাশাপাশি বিধায়ক, এমপিদের তহবিলের টাকা খরচের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। এবার সেই নিয়মেরই বদল চাইলেন বিজেপি নেত্রী তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল। সোমবার পশ্চিম বর্ধমানের ডিপিএলও সোমনাথ পালের সঙ্গে বিধায়ক তহবিলের টাকা খরচের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন অগ্নিমিত্রা।

    জেলাশাসক অফিসে তিনি বলেন, এমন সিস্টেম করা আছে, ইউসি না দিলে ফান্ড আসে না। সামনেই নির্বাচন। আমি চাই, আমার যে কাজগুলি জমা করা আছে তার টাকা যেন দেওয়া শুরু হয়ে যায়। এই প্রসেস, নিয়মগুলি যেন না আটকায়। 

    রাজনৈতিক মহলের মতে, এতদিন ধরে বিজেপি নেতারা যে সুরে কথা বলতেন, তার ঠিক উল্টো সুর অগ্নিমিত্রার গলায়। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার টাকা আটকে দেওয়ার প্রসঙ্গে বিজেপি এই ‘ইউসি’কে হাতিয়ার করত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সহ তাবড় বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, রাজ্য টাকা খরচের হিসেব দেয় না। ইউসি জমা করে না। তাই কেন্দ্র টাকা দেয় না। যদিও তৃণমূলের দাবি, সময়মতো ইউসি দেওয়ার পরও কেন্দ্র টাকা ছাড়েনি। এবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা ইউসি নিয়মকেই পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেন।

    বিজেপি নেত্রীর এহেন ভোলবদল প্রসঙ্গে একটি প্রশাসনিক তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে নির্বাচনে জিতে যাঁরা এমএলএ হয়েছেন, তাঁদের মোট ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বিধায়ক তহবিল হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রথম দু’বছর ৬০ লক্ষ টাকা করে, পরের তিন বছর ৭০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম কিস্তির টাকার কাজের ৩০ শতাংশ ইউসি জমা করতে হয়। তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় এসে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখ অগ্নিমিত্রা পল বিধায়ক তহবিলের মাত্র ১কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার কাজ শুরু করাতে পেরেছেন। সময়মতো ইউসি জমা না হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী বাকি টাকা আসেনি।

    তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি নেত্রী নিজের বিধানসভা এলাকায় সময় দেননি। কোন এলাকায় কী প্রয়োজন, তা তিনি জানেন না। তিনি কী কাজ করেছেন, ভোটের সময় সেই প্রশ্ন উঠবে। তা বুঝতে পেরেই নিয়ম ভেঙে টাকা পেতে চাইছেন। যে নেত্রী সবসময় রাজ্য সরকার ও তার দপ্তরকে আক্রমণ করেন, এদিন তাঁকে অনেকটাই নমনীয় হিসেবে দেখা গিয়েছে। যে দপ্তর বিধায়ক তহবিলের কাজের দেখভাল করে, তাদের তিনি ‘এফিসিয়েন্ট’ বলেছেন। তিনি এও বলেছেন, বিরোধী রাজনীতি করি বলে আমার ফান্ড আসতে দেরি হচ্ছে, একথা বলব না। পরে বলেন, শুধু নিজের জন্য নয়, সব বিধায়কদের জন্যই তিনি এই আর্জি করছেন।

    তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, উনি কি ভুলে গিয়েছেন, কেন্দ্র কোন ‘অপবাদে’ বাংলার প্রাপ্র্য টাকা আটকে রেখেছে? আমাদের বিধায়কদের কাজ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। উনি এতদিন এলাকায় ছিলেন না। শেষ সময়ে ভোট পাওয়ার জন্য এসব মনে পড়ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)