• প্রচারের আড়ালে দীঘার ভেষজ উদ্যান জানতেই পারছেন না পর্যটকরা
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সৌমিত্র দাস, কাঁথি: প্রচারের অভাবে কিছুটা হলেও আড়ালে রয়ে গিয়েছে সৈকতশহর দীঘার ভেষজ উদ্যান বা হার্বাল গার্ডেন। দীঘা পুরনো জগন্নাথ মন্দির বা মাসির বাড়ি যাওয়ার রাস্তার উল্টোদিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পড়বে ভেষজ উদ্যান। এই উদ্যানে ১৬৫টি ধরনের ভেষজ গাছগাছড়া রয়েছে। বনবিভাগের সিলভিকালচার বিভাগের অধীনে এই উদ্যানটি পরিচালিত হয়। মেদিনীপুরে এর মূল অফিস রয়েছে। সেখান থেকেই সবকিছু মনিটরিং করা হয়। বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই  উদ্যানে এসে  ভেষজ গাছগাছড়া এবং তার গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন। বিভিন্ন সময়ে আয়ুর্বেদ বিভাগের শিক্ষক-পড়ুয়ারা এখানে আসেন এবং নানা অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হন। কিন্তু দীঘার মতো জায়গায় ভেষজ উদ্যানটি যেন এককোণে পড়ে রয়েছে। পর্যটক কিংবা উৎসাহী মানুষজন অনেকেই জানেন না যে, দীঘায় ভেষজ উদ্যান রয়েছে। 

    তবে, আগে পরিকাঠামো ততটা উন্নত ছিল  না। বছরখানেক আগে উদ্যানটির পরিকাঠামোগত কিছু সংস্কারের কাজ রয়েছে। সুদৃশ্য গেট এবং পেভওয়ে তৈরি হয়েছে। বেড তৈরি করে জিআই তার দিয়ে ছোট গাছগুলিকে ঘিরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও কিছু কাজ হয়েছে। ভেষজ উদ্যানের পরিচিতি বাড়াতে মূল রাস্তার পাশেই বিভাগীয় উদ্যোগে একটি বোর্ড টাঙানো হয়েছিল। সেই বোর্ড দেখে পর্যটকদের অনেকেই আসতেন। কিন্তু জগন্নাথ মন্দির তৈরির আগে দীঘা ফোরশোর রোডের রাস্তা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে সেই বোর্ড খুলে দেওয়া হয়। তারপর আর লাগানো হয়নি। অবিলম্বে প্রশাসনিক উদ্যোগে সেই বোর্ড লাগানোর ব্যবস্থা করলে খুবই ভালো হবে, এমনটাই বলছেন উদ্যানের কর্মীরা। 

    উদ্যানে ঢুকলেই দেখা যাবে, একাধিক বিশালাকার বোর্ডে গাছের নাম ও গুণাগুণ লেখা রয়েছে। কালমেঘ, পাথরকুচি, নয়নতারা, ঘৃতকুমারী, লালশিরা, রামবাসক, বিশল্যকরণী, ওলটকম্বল, রামতুলসী, সর্পগন্ধা, শ্বেত বেড়েলা, সঞ্জীবনী, থানকুনি, পুদিনা, আকন্দ, কাকমাচী, ঘোড়াবচ থেকে শুরু করে ১৬৫টি প্রজাতির গাছ রয়েছে উদ্যানে। প্রতিটি গাছের নাম এবং ছোট্ট বোর্ডে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে অনেক বড় গাছ রয়েছে, আবার অনেক ছোট গাছও রয়েছে। আবার কিছু লতা আকারের গাছও রয়েছে। চারদিক সবুজে সবুজে ভরে রয়েছে ভেষজ উদ্যান। ভিতরে ঢুকলে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য।  

    এই উদ্যানটি দেখভাল ও বাগান পরিচর্যা করার জন্য তিনজন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কেয়ারটেকার, অরণ্যসাথী ও বনসহায়ক। বেড়াতে আসা পর্যটক থেকে শুরু করে সকলেই বলছেন, জগন্নাথ মন্দির তৈরি হওয়ার পর দীঘার গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। সেখানে ভেষজ উদ্যানটিকে আরও উন্নত করতে পারলে এরও গুরুত্ব বাড়বে। এখানে পর্যটক এবং ভিড়ও আরও বাড়বে। বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক বাসবকান্তি দিন্দা বলেন, ভেষজ গাছগাছড়ার গুণ অপরিসীম। এর যে কত গুণ, তা বলে শেষ করা যাবে না। দৈনন্দিন জীবনে ভেষজকে অঙ্গ করে নিতে হবে। আমরা মানুষকে সবসময় ভেষজ  গাছগাছড়া এবং উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দিই। মূল কথা, ভেষজ উদ্ভিদ হল সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, সবু‌জায়ন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। উদ্যানের কেয়ারটেকার তাপস জানা বলেন, আমরা উদ্যানটিকে সবসময় সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আগত মানুষজনকে আমরা গাইড করি। তবে পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছুই বাস্তবায়িত হবে। আশা করছি, আগামীদিনে উদ্যানটি নতুন সাজে সেজে উঠবে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)