অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি সিমাফোর টাওয়ার, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা, ২০০ বছর ধরে হাওড়ার খটির বাজারে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে
বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: লাল ইটের গাঁথনির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৮০ ফুট উঁচু মিনার। এই মিনার দু’শো বছরেরও বেশি সময়ের সাক্ষী। ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সিমাফোর টাওয়ার এক সময় ছিল সামরিক বার্তা আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হওয়ার বহু আগে দৃশ্য-সংকেতের মাধ্যমে দূরবর্তী টাওয়ারে বার্তা পাঠাতো ব্রিটিশ সেনা। সেই প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় আজও নীরবে লুকিয়ে রয়েছে হাওড়ার আন্দুলে মহিয়ারী রোডের ধারে পরিত্যক্ত এই টাওয়ারের গায়ে। ব্রিটিশ স্থাপত্য আজ অবহেলায় জর্জরিত। টাওয়ারের চারপাশ দখল করে রয়েছে অস্থায়ী গুমটি দোকান। দিন দিন নষ্ট হচ্ছে কাঠামোর স্থায়িত্ব। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও দিন ভেঙে পড়লে ঘটতে পারে বিপর্যয়। তাই ব্রিটিশ যুগের এই ঐতিহ্য রক্ষায় প্রশাসন দ্রুত এগিয়ে আসুক, এমনটাই চান এলাকাবাসী।
ইতিহাস বলছে, ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলায় একাধিক সিমাফোর টাওয়ার বানিয়েছিল ব্রিটিশরা। কলকাতা থেকে বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তরপ্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এই সংকেতবাহক লাইনের নেটওয়ার্ক। সেই ব্যবস্থারই একটি অংশ ছিল মহিয়ারী রোডের ধারের এই টাওয়ার। ভিতরে ছিল সিঁড়ি, উপরতলায় টেলিস্কোপ। পিভলিং শাটার সিস্টেমে এক টাওয়ার থেকে আরেকটিতে পাঠানো হতো দৃশ্য-সংকেত। পরে টেলিগ্রাফ আবিষ্কার হলে অচল হয়ে পড়ে এই প্রযুক্তি। ডোমজুড় বাজার, শ্যামপুর ও জগৎবল্লভপুরে আরও কয়েকটি সিমাফোর টাওয়ার আজ ভগ্নদশার মুখে। তার তুলনায় মহিয়ারীর টাওয়ার এখন অপেক্ষাকৃত ভালো। তবু বিপদের আশঙ্কা যে প্রবল, তা সামনে গিয়ে দেখলেই স্পষ্ট। খটিরবাজারে সরস্বতী নদীর পাশে টাওয়ারের পায়ের কাছে সারি সারি অস্থায়ী দোকান। ১৯৭৮ সালের বন্যায় এই টাওয়ার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভিতরের সিঁড়ি সহ বহু কাঠামো ধসে যায়। কেবল লাল ইটের অমলিন দেহটি আজও টিকে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ঋতজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই টাওয়ার সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে ২০১১ সালে জেলাশাসককে গণস্বাক্ষর সহ চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের সাড়া মেলেনি।’ হাওড়ার আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন কল্যাণ দাস। তাঁর কথায়, ‘বেআইনি দখলের ফলে বিপদের ঝুঁকি আরও বেড়ে গিয়েছে। বড় ঝড় হলে ইট খসে পড়তে পারে যে কোনও মুহূর্তে। তাই এটি দ্রুত সংরক্ষণ করা জরুরি।’ হাওড়া জেলা পরিষদের দাবি, অস্থায়ী দোকানগুলি না সরানো পর্যন্ত ব্রিটিশ নিদর্শনটি সংস্কার করা সম্ভব হবে না। জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘পঞ্চায়েতের তরফে দোকানদারদের আগেই সরে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা সরলেই টাওয়ারের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ নিজস্ব চিত্র