শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: শেষ এসআইআর, অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল না। কিন্তু ২০২৫ সালের তালিকায় নাম রয়েছে। ইনিউমারেশন ফর্ম পাওয়ার পর তা পূরণ করে জমাও দিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে কিন্তু এখনও নিশ্চিন্ত নন। কারণ, সেই সব ফর্ম ‘খতিয়ে দেখে’ এবার ৩০ লক্ষ ‘সন্দেহভাজন’ ভোটার চিহ্নিত করে ফেলেছে কমিশন। অবিলম্বে এই ভোটারদের দেওয়া তথ্য বুথ লেভেল অফিসারদের ফের যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, দ্বিতীয়বার যাচাইয়ের সময় এই সব ভোটারের তথ্য সন্তোষজনক না হলে, তাঁদের শুনানির সম্মুখীন হতেই হবে।
সাধারণত ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে ভোটাররা ইনিউমারেশন ফর্মের নীচে ডানদিকের অংশ পূরণ করার সুযোগ পেয়েছেন। ওই অংশে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে ২০০২ সালের তালিকায় থাকা আত্মীয়, অর্থাৎ বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা কিংবা দাদু-দিদার নাম লেখার সুযোগ ছিল। কমিশন সূত্রে খবর, আত্মীয়ের নাম লিখে জমা পড়া এমন প্রায় ৩০ লক্ষ ফর্ম বা ভোটার ‘সন্দেভাজন’। কেন? কারণ, এই ফর্মে সংশ্লিষ্ট ভোটার যাঁকে আত্মীয় হিসেবে দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে ২০০২ সালের তালিকায় থাকা ব্যক্তির মিল নেই। যেমন ‘পায়েল মুখার্জী’ নামে এক ভোটারের নাম ২০০২ সালের তালিকায় ছিল না। ফর্মের মূল অংশে তিনি পিতা হিসেবে ‘দিলীপ কুমার মুখার্জী’র নাম উল্লেখ করেছেন। আবার ফর্মের নীচের ডান দিকে অংশে (যেখানে ২০০২ সালের তালিকা অনুযায়ী আত্মীয়ের নাম লেখার কথা) তিনি ‘হরিপদ চ্যাটার্জি’ নামে কোনও ব্যক্তির নাম দিয়েছেন। এবং তাঁকে নিজের ঠাকুরদা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ফলে এক্ষেত্রে বাবার পদবি ‘মুখার্জী’ হলেও ঠাকুরদা হয়েছেন ‘চ্যাটার্জি’। আবার কোনও ফর্মে ২০২৫ সালের তালিকায় থাকা ভোটারের বাবা হিসেবে যে ব্যক্তির নাম রয়েছে, তা তিনি ফর্মের নীচের ডানদিকের অংশে উল্লেখ করেননি। বরং সেখানে বাবা বলে অন্য কোনও নাম লিখেছেন। এছাড়াও একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ২০০২ সালের তালিকায় যে ব্যক্তি আত্মীয় হিসেবে চিহ্নিত, ২০২৫ সালের তথ্য তার সঙ্গে মিলছে না।
সূত্রের খবর, ইনিউমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ হওয়ার পর কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞরা তা মিলিয়ে দেখতে গিয়ে এইসব গলদ খুঁজে পেয়েছেন। পরবর্তীতে তা পর্যবেক্ষকদের নজরে এলে এইসব ফর্ম বিএলওদের ফের খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় কমিশন। ১১ তারিখের মধ্যে তাঁদের এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। বিএলওদের বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বার যাচাইয়ের সময় এইসব ভোটারের থেকে মেলা জবাব সন্তোষজনক না হলে তা বিশেষভাবে চিহ্নিত করে কমিশনকে জানাতে হবে। জানা যাচ্ছে, এই ধরনের ভোটাররা যেহেতু ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করেছেন, তাই খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁদের শুনানির মুখে পড়তে হবে। সূত্রের খবর, যে তথ্য তিনি ফর্মে উল্লেখ করেছেন, সেটি যে সঠিক, তা প্রমাণে উপযুক্ত নথি পেশ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে। এছাড়াও কমিশন নির্ধারিত ১১টি নথির মধ্যে যে কোনও একটি নথি দেখাতে হতে পারে। তেমনটা না করতে পারলে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম বাদ পড়াটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন কমিশনের এক আধিকারিক।