নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: তিনি বারাকপুরের দাপুটে বিজেপি নেত্রী। অর্জুন সিংয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে তাঁর ছবি আকছার দেখা যায়। এমনকি, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফ্রেমে তাঁর ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। এহেন বিজেপি নেত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে কল্যাণী এইমসে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে। ধৃতের নাম তনু খাস্তগীর। রবিবার রাতে কল্যাণী থানার গয়েশপুর ফাঁড়ি তাঁকে গ্রেফতার করে। সোমবার তাঁকে কল্যাণী মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই স্তরের এক নেত্রী চাকরি ‘বিক্রি’র অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় কাঁপুনি শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। তদন্তের জাল আরও ছড়ালে কোনও ‘বড় নাম’ কি উঠে আসবে? কানাকানি চলছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। তনুদেবীর অবশ্য দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। নিজের দলের এক বিধায়ক সহ রাজ্য স্তরের নেতৃত্বের একাংশকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
রিপন দাস, পঙ্কজ রায় এবং ইব্রাহিম মণ্ডল—এই তিনজন তনুদেবীর বিরুদ্ধে প্রতারণার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গয়েশপুর ফাঁড়িতে। তদন্তকারীরা জানান, এইমসে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তনুদেবী ইব্রাহিমের থেকে ৪০ হাজার, রিপনের থেকে ৮০ হাজার এবং পঙ্কজের থেকে ৮৭ হাজার টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। আরও অনেক চাকরিপ্রার্থীর থেকে এভাবে কয়েক লক্ষ টাকা তোলা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পারছেন তাঁরা। যদিও ধৃত নেত্রীর দাবি, এই টাকা তিনি নেননি। বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র এবং কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায় নিয়েছেন। সোমবার আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। এসব ফাল্গুনী পাত্রের চাল। কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়ের ভিডিও আমার কাছে রয়েছে। কারা কারা টাকা নিয়েছে, আমি সব নাম থানায় জমা দেব।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য কল্যাণীর বিধায়ককে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি। রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার সংসদের অধিবেশনে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান। ফাল্গুনী পাত্র বলেন, ‘এ বিষয়ে যা বলার, ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বলবে। আমি কোনও মন্তব্য করব না।’ তৃণমূল অবশ্য বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষে বিঁধতে দেরি করেনি। দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, রাজ্য বিজেপির উপরতলার সব নেতার সঙ্গে ছবি রয়েছে ওই নেত্রীর। দেশটা প্রধানমন্ত্রী বিক্রি করছেন। এঁরা নীচুতলায় হাত পাকাচ্ছেন, যাতে ক্ষমতায় এলে রাজ্য বিক্রি করতে পারেন।’ প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে ফাল্গুনী পাত্রের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুর চড়িয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তনু। সেই সময় দল তাঁকে শো-কজ করেছিল।