• কতটা ‘নিয়ম’ মানল রুফটপ রেস্তোরাঁ? আজ শুরু অভিযান, গোয়ার নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর যুদ্ধকালীন তৎপরতা শহরে
    বর্তমান | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তিন মাসের সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র ছ’দিন বাকি। তার মধ্যেই গোয়ায় ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। সেখানকার বার কাম রেস্তোরাঁয় পুড়ে মারা গিয়েছেন ২৫ জন। এই অবস্থায় শহরের রুফটপ রেস্তোরাঁগুলি নিয়ে ফের তৎপর হয়েছে কলকাতা পুরসভা। রুফটপ রেস্তোরাঁগুলি সরকার নির্দেশিত এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) মানল কি না, নিয়ম-বিধির বাস্তবায়ন কতটা হল, তা খতিয়ে দেখতে আজ, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কলকাতা পুরসভা, পুলিশ ও দমকলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন রুফটপ রেস্তোরাঁয় ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ করবেন। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এই অভিযান শেষ করা হবে। সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। 

    উৎসব মরশুমে ব্যবসার কথা মাথায় রেখে দুর্গাপুজোর মুখে শহরের রুফটপ রেস্তোরাঁগুলি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, নতুন কোনও রুফটপ রেস্তোরাঁ চালু করা যাবে না। পুরোনো যেগুলি রয়েছে, তাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ‘মুচলেকা’ নিয়ে রেস্তোরাঁ খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। রুফটপ রেস্তোরাঁ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী (পাঁচজন মন্ত্রী রয়েছেন) একটি এসওপি প্রকাশ করে। মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোয়ন্নন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, পুজোর আগে রুফটপ রেস্তরাঁ খুলতে গেলে মানতে হবে একাধিক শর্ত। এসওপির সমস্ত নিয়ম কার্যকর করতে হবে আগামী তিন মাসের মধ্যে। তিন মাস পর পরিদর্শন হবে। 

    গত ২৯ এপ্রিল রাতে বড়বাজারের একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শিশু সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তারপর নবান্নের নির্দেশে রুফটপ কাফে বা রেস্তোরাঁ বন্ধ করার ফরমান জারি করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু এগুলি মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হলে বহু মানুষের রুটিরুজি প্রশ্নের মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে অগ্নি-বিধি মেনে কীভাবে বহুতলে বা রুফটপে রেস্তোরাঁ চালানো সম্ভব, তার জন্য অভিন্ন বিধি প্রণয়নের তোড়জোড় শুরু হয়। ফিরহাদের নেতৃত্বে মন্ত্রীদের কমিটি গড়ে দেন মুখ্যসচিব।

    এসওপিতে বলা হয়েছিল, যেসব বহুতলে ছাদ-রেস্তোরাঁ চলছে, তাদের রাস্তার দিকে ছাদের অংশ ৫০ শতাংশ ছেড়ে ব্যবসা চালাতে হবে। ওই অংশ বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। রাখতে হবে আলাদা সিঁড়িও। বহুতলের সিঁড়ির দরজা সব সময় খোলা রাখতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভির নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। রেস্তোরাঁয় গ্যাস সিলিন্ডার বা স্টোভ ব্যবহার বন্ধ করে মাইক্রোওভেন, ইনডাকশনে রান্নার কথা বলা হয়। জানানো হয়েছিল, আগামী তিন মাসের মধ্যে এসওপির সব শর্ত মানা না হলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাতিল হবে লাইসেন্স। 

    ইতিমধ্যে গোয়ায় ঘটে যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। কলকাতা পুর-প্রশাসন  সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়। তাই সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই অভিযান শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে খবর, শহরের মোট ৮৪টি রুফটপ রেস্তোরাঁর তালিকা তাদের কাছে আছে। তার মধ্যে ৩০টি রেস্তোরা লিখিতভাবে জানিয়েছিল যে তারা সরকারের এসওপি মেনে চলবে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা চালানোর কথা জানিয়েছিল, তারা কতটা নিয়ম মানল, নতুন করে কী কী পরিকাঠামো তৈরি করল—এসবই খতিয়ে দেখা হবে। যেসব রেস্তোরাঁ নিয়ম মেনে চলার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কি না, দেখা হবে তাও।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)