মনোরঞ্জন প্রামাণিক: হইহুল্লোড়ের মধ্যেই খবরটা বিশাল পাহাড়ের মতো এসে পড়ল বিয়েবাড়িতে। এক লহমায় থেমে গেল সব আনন্দ। বিয়েবাড়িতে এসে ছেলেকে নিয়ে পুকুরে স্নান করতে করতে গিয়েছিল বাবা-ছেলে। সেখান থেকে আর ফিরল না কেউই। মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটেছে পুরুলিয়ার টামনা থানার বেলগুমা এলাকায়। মৃতদের নাম কৌশিক দাস(৫৩) ও হিমাংশু বিশ্বাস(১৮)। দুজনেই বিয়েবাড়িতে এসেছিলেন মুম্বই থেকে। সেখানেই সব শেষ।
মামার ছেলের বিয়েতে মুম্বই থেকে পরিবারকে নিয়ে চাঁদমারিডাঙায় মামার বাড়ি এসেছিলেন কৌশিক বিশ্বাস। বিয়ে বাড়ির আনন্দে মেতেছিলেন সকলে। ছেলে ও কয়েকজনকে নিয়ে স্থানীয় জামবাঁধে যান স্নান করতে। বহুদিন সাঁতাদের অভ্যেস নেই। পাশাপাশি জলও ছিল বেশ গভীর। সবার চোখের সামনেই জলে ডুবে যায়ন কৌশিকবাবু ও তাঁর ছেলে হিমাংশু। সবাই যখন জলে ঝাঁপাঝাপিতে ব্যস্ত তখন তার মধ্যেই ঘটে য়ায় এই দুর্ঘটনা।
ঘটনার পরপরই আত্মীয়রা খবর দেন থানায়। টলে আসে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। প্রায় আধঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর দুজনের দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদেহ দুটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
মৃতের মামা অমিত মজুমদার বলেন, ও বলল চান করব। আমি বললাম বাঁধ খুব গভীর। একদম বেশি নীচে নামবে না। ওইসব বলে ঘরে ফিরেছি। ঘরে এসে শুনেছি এই কাণ্ড। ওরা চারজন ছিল। তার মধ্যে ছিল আমার ভাগ্নে ও তার ছেলে।
মৃতের অন্য এক আত্মীয় কৃপাময় মজুমদার বলেন, স্নান করার জন্য় দাদারা এসেছিল। ছোট বাচ্চাও ছিল। আমি সাঁতার কেটে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। তার মধ্যেই এরকম ঘটনা ঘটে গেল। অনেক কোঁজ করলাম। পাওয়া গেল না ওদের। আমরাই বিয়ে ছিল। সেইজন্যই ওরা মুম্বই থেকে এসেছিল।
উল্লেখেয, কিছুদিন আগে এরকমই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল বর্ধমানে মন্তেশ্বরে। মা কাজ করছিলেন বাথরুমে। কাপড় কাচছিলেন। সেইসময় তাঁর ২ বছরের শিশু জলভরা বালতিতে নিজের জামা ধুতে যায়। আর তখনই কোনওক্রমে সে বালতিতে পড়ে যায়। মায়ের আজান্তেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
গত ২৮ এপ্রিল বীরভূমে জলে ডুবে মৃত্যু হয় ৩ শিশুর। খেলতে খেলতে তারা নেমে পড়ে দিঘির জলে। মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটে বীরভূমের বারা গ্রামে। মৃত শিশুদের নাম নাসরিন খাতুন, নুরানী খাতুন ও তামিম সেখ। মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত বছর ১৯ ডিসেম্বর মাথাভাঙায় নদীতে ঝিনুক কুড়তে গিয়ে মৃত্যু হয় ৩ শিশুর। মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল ওই তিনজন। শখের বসে নদীতে তারা ঝিনুক কুড়োতে নামে। মৃত তিনজনের মধ্যে দুজন সম্পর্কে ভাই বোন এবং আরেকজন তাদের মামাতো ভাই। তিনজনেরই বয়স ১০-১২ বছরের মধ্যে।