‘নিয়ম মানুষের ভালোর জন্য, হেনস্তার জন্য নয়’! ইন্ডিগো বিপর্যয়ে মোদির মুখে আত্মসমালোচনা?
প্রতিদিন | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: নিয়মকানুন তৈরি হয় সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য। মানুষকে হেনস্তা করার জন্য নয়। ইন্ডিগো বিপর্যয়ের আবহে এনডিএ সাংসদদের বৈঠকে এই কড়া বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রশ্ন উঠছে, এই বার্তার মধ্যে দিয়ে কি নিজের প্রশাসনেরই সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী? অনেকের মত, এখন যাবতীয় নিয়মকানুন বানানোর দায়িত্ব তো মোদিরই প্রশাসনের উপর। ফলে দায়ও তাঁর সরকারেরই। আদতে মোদি প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলেন, আইনকানুনে কোনও ভুল নেই। ভুল সেই সব আইনকানুনের প্রয়োগে হয়েছে। ঘটনাচক্রে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্বে যিনি, সেই রামমোহন নায়ডু এনডিএ-র শরিক দল টিডিপির সাংসদ।
ইন্ডিগোর উড়ান বাতিলের জেরে যাত্রী হয়রানি এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে সোমবারই রাজ্যসভায় জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও জানালেন, এনডিএ সাংসদদের বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন মোদি। কিরেন বলেন, “মানুষের যাতে দুর্ভোগ না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নিয়মবিধি যা রয়েছে, তা সবই ভালো। কিন্তু এই সব নিয়মবিধি বানানো হয় গোটা ব্যবস্থাকে আরও ভালো করার জন্য। মানুষকে হেনস্তা করতে নয়।” কিরেনের সংযোজন, “প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এমন কোনও নিয়মকানুন থাকা উচিত নয়, যার কারণে মানুষের সমস্যা হতে পারে। আইন মানুষের সুবিধার জন্য, বোঝা হওয়ার জন্য নয়।”
গত কয়েকদিন ধরে চলা সঙ্কটের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে ভারতের বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় ইন্ডিগোর মতো সংস্থার কার্যত একাধিপত্য নিয়ে। তার প্রেক্ষিতে নায়ডু জানিয়েছিলেন, বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আরও বিমান সংস্থার যোগদান চায় কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতে পাঁচটি বড় বিমান সংস্থার কাজের সুযোগ রয়েছে বলেই দাবি করেছেন তিনি। কয়েকদিন ধরে ইন্ডিগোর হাজার হাজার উড়ান বাতিল, যাত্রীদের চরম হেনস্থার পিছনে অবশ্য সংস্থাটির ‘অভ্যন্তরীণ সঙ্কট’কেই দায়ী করেছেন মন্ত্রী। রাজ্যসভায় নায়ডু বলেছেন, “আমরা পাইলট, বিমানকর্মী ও যাত্রীদের প্রতি নজর রাখি। সব বিমান সংস্থার কাছেই এই বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি। কী ভাবে কর্মীদের কাজের সময় স্থির করা হবে, সে ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ইন্ডিগোর। কিন্তু যাত্রীরা অনেক দুর্ভোগ সহ্য করলেন। সেই পরিস্থিতিকে আমরা সহজ ভাবে নিচ্ছি না।”
সাম্প্রতিক সঙ্কট নিয়ে বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-র কাছে কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব পাঠিয়েছে ইন্ডিগো। যাত্রীদের কাছে দুর্ভোগ নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, প্রাথমিক ভাবে তাদের মনে হয়েছে, বিভিন্ন কারণের ফলশ্রুতিতে এমন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি, শীতের সময়ে উড়ানের সময় পরিবর্তন, খারাপ আবহাওয়া, বিমান পরিবহণ ব্যবস্থায় জট বেড়ে যাওয়া এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময়সূচির মতো বিষয়গুলি। তবে সঙ্কটের প্রকৃত কারণ এখনই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, এ ব্যাপারে আরও সময়ের প্রয়োজন বলেই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।