স্টাফ রিপোর্টার: ঠিক ছিল সোমবার দুপুরে বিজেপিতে যোগদান করবেন তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া ছাত্রনেতা প্রান্তিক চক্রবর্তী ও রাজন্যা হালদার (Rajanya Haldar)। কিন্তু বিকেলের পরই আবহাওয়া বদল। এ কথা-সে কথায় সামনে এল, ‘তৃণমূলের উচ্ছিষ্ট’দের যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে তুমুল কলহ। সে কলহ একেবারে উপরতলায়। বিশেষ সূত্রে খবর, রাজ্য নেতৃত্বের তরফে ঘুরিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘তৃণমূলের আবর্জনা আর উচ্ছিষ্ট নিয়ে কতদিন আর বিজেপি চলবে!’ এর মধ্যেই খবর আসে, দলের রাজ্য নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য দিল্লি থেকে না ফেরা পর্যন্ত এই যোগদান নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হবে না। অসমর্থিত সূত্রে আরও জানা যায়, টিপ্পনি কেটে অনেকেই নাকি বলেছেন, ‘উনি (শুভেন্দু) তো মনে হচ্ছে গোটা রাজ্যটাই চালাচ্ছেন। যোগদানের সব কিছুও উনিই দেখবেন!’ বিজেপির সদর দপ্তরে যা নিয়ে তুমুল কলহ এবং এর জেরেই আপাতত স্থগিত হয়ে গেল প্রান্তিক-রাজন্যার বিজেপিতে যোগদান। লকেটও এ নিয়ে আর মুখ খোলেননি।
সোমবার সকালে প্রান্তিক-রাজন্যার (Rajanya Haldar) বিজেপিতে যোগদানের খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেখা যায় নিজেদের ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট সেরে রেখেছেন স্বামী-স্ত্রী। স্বামী বিবেকানন্দর ছবিতে মালা দিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন রাজন্যা। ক্যাপশন লিখেছেন, ‘আমার বাংলা রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্র ধার চাই।’ সঙ্গে লেখা, ‘লেটস চেঞ্জ’। প্রান্তিকও একই ধরনের ছবি পোস্ট করেছেন বিবেকানন্দরই বাণী ধার করে। লিখেছেন, ‘ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে পৌঁছনো না পর্যন্ত থেমো না।’ বেলা গড়িয়ে সেকেন্ড হাফে অন্য খবর! প্রান্তিক বা রাজন্যা কারও প্রতিক্রিয়াই এই প্রেক্ষিতে পাওয়া যায়নি। তবে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি সিপিএম। একটি ভিডিওয় এই না হওয়া যোগদানকে ‘লগ্নভ্রষ্ট’ বলে খোঁচা দিয়েছেন বাম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। কারও নাম না করে বলেছেন, ‘সকাল থেকেই শুনছিলাম, ইনি জয়েন করবেন, তৃণমূল থেকে ওমুক নেতা ওমুক নেত্রী বিজেপিতে যোগদান করবেন। সবশেষে যা বুঝতে পারা যাচ্ছে, আসলে লগ্নভ্রষ্ট দলবদল হতে চলেছে।’ সায়নের বক্তব্য, ‘যে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি বিজেপি এত বড় বড় কথা বলেছে, তাতে নাম জড়িয়ে পড়া নেতাকে বিজেপিতে যোগদান করাচ্ছে। তারপর আবার শোনা যাচ্ছে, দিল্লিতে একজন নেতা আটকে গিয়েছেন, তিনি কলকাতায় ফিরলে হবে! সব মিলিয়ে বলতেই পারি, সাত মণ তেল পুড়ল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না।’
বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের এক আদি নেতা শামসুর রহমানও এদিন সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, ‘তৃণমূলের উচ্ছিষ্টগুলো আবার বিরোধী দলনেতার হাত ধরে বিজেপিতে ঢুকতে চলেছে। ওগুলোকে নেওয়া কি খুব প্রয়োজন? বিজেপির আদি কর্মীদের চাঙ্গা করলে হতো না, তৃণমূলের পচা দাগিদের নিতে হবে?’ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এ নিয়ে মুখ না খুললেও শমীক ভট্টাচার্যর আপত্তিতেই এদিন প্রান্তিক-রাজন্যার যোগদান স্থগিত রাখা হল বলে খবর। সূত্রে খবর, শমীক জানিয়েছেন, বাংলায় ফিরে এসে তিনিই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। একুশের মতো গণহারে যোগদান হবে না। যোগদান নিয়ে শুভেন্দুর ব্যাখ্যা, “লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্ক্রুটিনি কমিটি হয়েছে। আবেদন সব পাঠানো হচ্ছে শমীক ভট্টাচার্যর কাছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল।”